সদ্য সাবেক হওয়া জম্মু ও কাশ্মিরের লাদাখ সীমান্তে ভারত বনাম চীনের ঠান্ডা লড়াই ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় আনো সৈন্য পাঠাচ্ছে ভারত। বস্তুত, ২০১৭ সালে সিকিম-ভুটান-তিব্বত সীমান্তের বিতর্কিত দোকালাম ভূমিখণ্ড নিয়ে ৭৩ দিন ধরে চলা ভারত ও চীনের বিবাদকে ছাপিয়ে লাদাখ-সঙ্কট আরো উত্তপ্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে গালওয়ান এবং প্যাংগং সো অঞ্চলে সম্প্রতি নতুন করে ১১৪টি বাঙ্কার নির্মাণ করেছে। পিপলস লিবারেশন আর্মির অন্তত দু’টি নয়া বাহিনীকে পাঠানো হয়েছে সীমান্তে। এমনকী সম্প্রতি দু’বার ভারতীয় এলাকায় পেট্রল পয়েন্ট ১৪ এবং গোর্গা পোস্টে চীনের সেনাবাহিনী ঢুকে পড়ার চেষ্টা চালায়। সেই আগ্রাসনের প্রয়াস অবশ্য ভারতের তৎপরতায় সফল হয়নি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বর্তমানের খবরে বলা হয়, ভারতীয় সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে গত শুক্রবার গোপনে লে পরিদর্শন করে ফেরার পরই ভারত আরো বেশি করে সেনা পাঠানো শুরু করেছে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায়। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, লে ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনকে ‘ফরওয়ার্ড অপারেশনাল অ্যালার্ট’ দেয়া হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে প্যাঙ্গং সো হ্রদে গত এক সপ্তাহে একঝাঁক অতিরিক্ত টহলদারি নৌকা পাঠানো হয়েছে। টহলদারি চলছে দিবারাত্র। গোটা পরিস্থিতির উপর নজরদারি করছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। জানা যাচ্ছে, সেনাপ্রধান ফেরার পর অজিত দোভাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লাদাখের পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল অবহিত করেছেন।
বর্তমানের খবরে বলা হয়, আর এই প্রেক্ষাপটেই নানারকম খবরও আসতে শুরু করেছে ভারত-চীন উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে। শনিবার থেকেই শোনা যাচ্ছিল, ভারত ও চীনের মধ্যে তৈরি হওয়া টেনশন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, কয়েক দিন আগে, ইন্দো টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশের কয়েকজন জওয়ানকে চীনের লালফৌজ নাকি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় অপহরণ করে আটকে রাখে। ভারতীয় জওয়ানদের আগ্নেয়াস্ত্রও ছিনিয়ে নেয়া হয় বলে রটে যায়। পরে প্রত্যেককে মুক্তি দিয়ে অস্ত্রও ফিরিয়ে দেয়া হয়।
খবরে রোববার অবশ্য ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এরকম কোনো ঘটনাই হয়নি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আমন আনন্দ বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে এমন কোনো অসত্য তথ্য প্রচার করা উচিত নয়, যা দেশের স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর। ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী সদা তৎপর। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তাবাহিনীর কাউকেই চীনাফৌজ অপহরণ করেনি। এই মিথ্যা খবর জাতীয় সুরক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক।
বর্তমানের খবরে বলা হয়, চীনের পক্ষ থেকে লাদাখের যে অংশলোলিকে নিজেদের এলাকা হিসেবে দাবি করা হচ্ছে, ঠিক সেই ‘পেট্রলিং পয়েন্ট ১৪’ এবং গোর্গা পোস্টের অদূরেই চীন বাঙ্কার আর তাঁবু নির্মাণ করেছে। একদিকে চীনের সঙ্গে লাদাখ সীমান্তে যখন এই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে,ঠিক তখন নেপালও ১২ বছর পর চীনের সীমান্তে পৌঁছে যাওয়ার জন্য একটি সড়ক নির্মাণ আবার শুরু করেছে। ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডারচুলা-তিনকর রোড প্রকল্প এতদিন নেপাল বন্ধ রেখেছিল। ফের শুরু হওয়া এই সড়ক উত্তরাখণ্ডের গা ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে। এই প্রকল্পের যাবতীয় সহায়তা যে বেইজিং দিচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই ভারতের। প্রশ্ন হল, চীনের উদ্দেশ্য কী?
সূত্র : বর্তমান