জগলুল পাশা রুশো
ময়মনসিংহ দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও একটি নাম। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে ধারণ করে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে শৈল্পিক এবং নান্দনিক সজ্জায় নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। প্রায় ৫ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট এই জাদুঘরে মোট ৫টি গ্যালারি রয়েছে। গত শনিবার (১৩ জুলাই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই জাদুঘরটি উদ্বোধনের পর থেকে সাধারণ দর্শনার্থীরা ভীড় জমাচ্ছেন এই জাদুঘরে এসে।
পুলিশ লাইন্সে মূল ফটকের বাম পাশে মসজিদের ঠিক পাশেই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত পুরনো পুলিশ হাসপাতাল ভবনটিকে সংস্কার করে নতুনভাবে এই জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। জাদুঘরে ঢুকতেই প্রথম গ্যালারিতে দেখা মিলবে ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার শিরোনামে প্রাচীন মৌর্য আমল থেকে শুরু করে সুলতানী ও মোঘল আমল এবং এর পরে বৃটিশ ও পাকিস্তানি আমলের কালানুক্রমিক পুলিশি ক্রমবিকাশ। একই সাথে ঈশাখাঁর সাথে মানসিংহের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটও চিত্রকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এর ঠিক পাশেই দ্বিতীয় গ্যালারীতে “জনতার পুলিশ” শিরোনামে ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশের নবরূপে আবির্ভূত হবার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্রসমূহ প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। “রণাঙ্গনে সূর্যসৈনিক” শিরোনামে তৃতীয় গ্যালারীতে ১১ নং সেক্টর তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে কর্মরত যেসব পুলিশ যুদ্ধে আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের নামসহ বর্ণণা এবং এই অঞ্চলে সংঘটিত ২৭টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বর্ণণা তুলে ধরা হয়েছে।
জাদুঘরের চতুর্থ গ্যালারীর নামকরণ করা হয়েছে “গৌরবময় ঐতিহ্যে ময়মনসিংহ”। এই গ্যালারীতে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৃহত্তর ময়মনসিংহে মোট ৪৭ বার আগমন করেছিলে সেই ইতিহাস বর্ণণামূলকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও গণকবর ও বধ্যভূমিগুলোর বর্ণণা রয়েছে এখানে। আরও আছে মৈমনসিংহ গীতিকা সম্পর্কিত তথ্য শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মহুয়ার প্রতিকৃতি ছাড়াও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার ও গিরিশচন্দ্র সেন এই ৫ জন কীর্তিমানের জীবনগাঁথার বিস্তারিত বর্ণণা “কালপুরুষ” নামে দেয়ালে প্রদর্শন করা হয়েছে।
সর্বশেষ প্রান্তে “মহাজীবনের পট” শিরোনামে পঞ্চম গ্যালারীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহজাহান আহমেদের তুলির আচড়ে স্ক্রল পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতিটি উল্লেখযোগ্য অংশ এবং পরাধিনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে বাঙালি জাতিসত্বার বীরত্বগাঁথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জাদুঘরের বারান্দাতে মুক্তিযুদ্ধ এবং পুলিশের বিভিন্ন গৌরবময় তথ্য প্রদর্শন করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের উদ্যোগে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত দৃষ্টিনন্দন এই জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মাসুম আহাম্মদ ভূইয়া জানান, রণাঙ্গনের সূর্যসৈনিকদেক বীরত্বগাঁথাকে উপজীব্য করে এই জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে।
জাদুঘরটি উদ্বোধনে পূর্বে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি বলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চল ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনেকটাই সন্নিবেশিত হয়েছে এই জাদুঘরে। প্রজন্ম প্রজন্মান্তরে মুক্তিযদ্ধের সঠিক ইতিহাস জাগিয়ে রাখবে অনন্তকাল।
জাদুঘর উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই জাদুঘরের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর জীবনকাল এবং তার আহবানে সাড়া দিয়ে বাঙ্গালির মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃষ্টি সংস্কৃতি, সোনালী মানুষ সম্পর্কে ধারণা রয়েছে এবং ইতিহাস জানার সুযোগ রয়েছে। ##