‘ড্রইংরুমে ঢুকেই দেখি, রত্নার সাথে একটি ছেলে বসে। ভীষণ শান্ত, ভদ্র চেহারা। ওর সাথে কী একটি মেগায় অভিনয় করছে। তারই রিহার্সেল দিতে এসেছে। আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়াল। থমকে গিয়েছিলাম সেই মুহূর্তে। ওরকম ভাসা, ভাসা ডাগর চোখ পুরুষের হয়! ওই চোখ দুটোই সেদিন মাটিতে আমার পা দুটোকে যেন আটকে দিয়েছিল। ওর নম্রতা, ভদ্রতায় আবিষ্ট ততক্ষণে। সেই প্রথম দেখা, প্রথম আলাপ। এত বছর পরেও যেন জীবন্ত হয়ে চোখের সামনে ভাসছে।’
ইরফান খানের মৃত্যুর পর এই প্রথম মুখ খুললেন বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম দেখার স্মৃতি শেয়ার করে নাসির আরো জানিয়েছেন, চট করে তিনি কারোর মুখোমুখি হন না। সেদিনের সেই আলাপের কৃতিত্ব পুরোটাই মরহুম অভিনেতার ব্যক্তিত্বের।
অসংখ্য অনুরাগীকে কাঁদিয়ে বুধবার চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হন ইরফান খান। কোলনে সংক্রমণের কারণে মঙ্গলবার রাতেই মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অভিনেতাকে। এর আগে ‘পিকু’ ছবির অন্যতম এই অভিনেতা বেশ কয়েক মাস ধরে মস্তিষ্কের টিউমারের সাথে লড়াই করে কয়েক মাস আগে লন্ডনে চিকিৎসা শেষে মুম্বাইয়ে ফিরে আসেন।
মঙ্গলবারই ইরফান খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সেই সময় অভিনেতার মুখপাত্র জানান, ইরফান খানকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অবস্থা স্থিতিশীল। এই খবর শুনে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও আশ্বস্ত হয়েছিলেন ইরফানপ্রেমীরা। কিন্তু শেষরক্ষা হল কই! শুধু শোকের সময় পিছিয়ে হল বুধবারের মেঘলা সকাল।
বলিউডের সমস্ত তারকা, অসংখ্য অনুরাগী সোশ্যালে মরহুম এ অভিনেতাকে নিয়ে মুখ খুললেও নীরব ছিলেন নাসির। রোববারের পোস্টে তিনি প্রথম দেখার কথা পোস্ট করে আরো লেখেন, কোনোদিন ইরফানকে আত্মগরিমায় ভুগতে দেখেননি। অথচ সমস্ত অভিনয়ে চূড়ান্ত বুদ্ধিমত্তার ছাপ। তার এই নমনীয় অথচ আত্মবিশ্বাসী আচরণের অনুরাগী তিনি আজীবন থাকবেন। মনের এই জোর অনেক কষ্টে মেলে। তাই ইরফানের এই আত্মসংযম অনেক অভিনেতার ঈর্ষার বস্তু ছিল। অনেকেই বলেন, ইরফানের এই অভিনয় প্রতিভা সহজাত, ওপরওয়ালার দান। নাসিরুদ্দিন বলছেন, নিজেকে সারাক্ষণ ভেঙেচুড়ে, ঘষামাজা না করলে এই জায়গায় পৌঁছোনো যায় না!
ইরফানের স্মৃতি সযত্নে লালন করতে রয়ে গেলেন স্ত্রী সুতপা ও দুই ছেলে।
সূত্র : এনডিটিভি