করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিশুদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণ এড়াতে সচেতন মা-বা শিশুদেরকে ঘর থেকে বের হতেও দিচ্ছেন না। শিশুরা বাইরে থাকলে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে বলে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনের মতো ডিভাইস কম ব্যবহার করে। কিন্তু এখন সে সুযোগ নেই বলে তারা এসব ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি অনুষঙ্গ হলো হেডফোন। কিন্তু শিশুরা হেডফোন ব্যবহার করলে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে, অন্যথায় শ্রবণশক্তি কমে যাবে। আপনাকে দুটো বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে: হেডফোনের ভলিউম ও ব্যবহারের সময়।
গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের মধ্যে শ্রবণশক্তি হারানোর ঘটনা বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে হেডফোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাজীবন কানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হয়। কারণ শ্রবণশক্তি হারালে তা ফিরে পাওয়া যায় না। একারণে কর্মস্থলে শব্দের নির্দেশনাবলি মেনে চলা হয়। কর্মীরা কানের সুরক্ষায় নির্দেশনাবলি অনুসারে ইয়ারপ্লাগ অথবা ইয়ার ডিফেন্ডার ব্যবহার করেন।
একটি গবেষণায় ২০ বছর ধরে ৩৯ দেশের ৩.৩ মিলিয়নের বেশি শিশুর শ্রবণশক্তি রিভিউ করা হয়। দেখা গেছে, ১৮ বছরের মধ্যে ১৩ শতাংশ শিশুই উল্লেখযোগ্য শ্রবণশক্তি হারিয়েছে। এদের একটা অংশ শ্রবণযোগ্য সীমার মধ্যে থেকেও শুনতে ব্যর্থ হয়েছে ।এ গবেষণা বলছে- শিশুদের মধ্যে শ্রবণশক্তি কমার হার বাড়ছে, কিন্তু গবেষকরা এর জন্য শুধু একটা কারণকে দোষারোপ করেননি। অনেক কারণে শিশুদের শ্রবণশক্তি কমতে পারে। তেমন একটা কারণ হলো হেডফোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার।
হেডফোন ব্যবহারের সঙ্গে শ্রবণশক্তি কমার সরাসরি সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে বেশি গবেষণা হয়নি। এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসে ৯-১০ বছর বয়সি শিশুদের ওপর গবেষণা চালানো হয়, যেখানে ১৪ শতাংশ শিশু উচ্চ মাত্রায় শ্রবণশক্তি হারিয়েছে। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশই হেডফোন নিয়ে পোর্টেবল মিউজিক ডিভাইস ব্যবহার করত। এ গবেষণা ধারণা দিচ্ছে, শ্রবণশক্তি হারানোতে হেডফোনের ভূমিকা থাকতে পারে। সম্পূর্ণ শতাংশে নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, উচ্চ শব্দ শ্রবণশক্তিকে ধ্বংস করে। ঘনঘন উচ্চ শব্দের সংস্পর্শে কানের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে অথবা শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যেতে পারে। যাদের শ্রবণ সমস্যা রয়েছে, তাদের কানে ইতোমধ্যে কিছু অনিরাময়যোগ্য ক্ষতি হয়েছে।
শিশুর শ্রবণশক্তি রক্ষার্থে যা করবেন
শব্দের লাউডনেস ও ডিউরেশন উভয়ের ওপর শ্রবণশক্তি ধ্বংসের ঝুঁকি নির্ভর করে। উভয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখলে শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকি কমে যাবে। শিশুদের হেডফোনের লাউডনেস মনিটর করা অভিভাবকদের জন্য একটু কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু নয়। আপনার শিশু হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করলে নিরাপদ ভলিউম সেট করে দিন। তাকে ভলিউম বাড়াতে অনুৎসাহিত করুন। সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হবে ভলিউম বাড়ালে উচ্চ শব্দে কানের ক্ষতি হবে, যার ফলে যা বলা হবে তা শুনতে পাবে না। কিছুসময় পরপর ভলিউম চেক করুন, কারণ শিশুদেরকে যত পরামর্শই দেয়া হোক না কেন ভলিউম বাড়িয়ে শোনার প্রবণতা রয়েছে।
এক হাত দূর থেকে ডেকে দেখুন। ডাকে সাড়া দিলে বুঝে নিতে পারেন যে নিরাপদ ভলিউমে শুনছে। অন্যথায় ভলিউম কমাতে হবে। শিশুদের জন্য বিশেষ হেডফোনও রয়েছে, যেখানে লাউডনেসকে সাধারণত ৮৫ ডেসিবেলের মধ্যে সীমিত রাখা হয়। এ সীমিতকরণ ঝুঁকি কমালেও সারাদিন হেডফোন ব্যবহারেও কানে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বাইরের শব্দ প্রতিরোধ করতে পারে এমন হেডফোনও রয়েছে, যা শিশুদেরকে ভলিউম বাড়াতে প্ররোচিত করবে না। তারপরও কিছুক্ষণ পরপর ভলিউম চেক করা ভালো, কারণ শিশুদের ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা প্রযোজ্য নয়।
হেডফোন ব্যবহারের ডিউরেশন তথা সময়ের দৈর্ঘ্যও খেয়াল রাখতে হবে। শিশুরা যেন ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার বেশি হেডফোন ব্যবহার না করে। সময়ের দৈর্ঘ্য যত লম্বা হবে, শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকি তত বাড়বে। অপ্রয়োজনে হেডফোনের ব্যবহার কমাতে হবে। শিশুর বয়সের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কত বছর বয়সি শিশুদের জন্য হেডফোন ব্যবহার নিরাপদ তা নিয়ে গবেষণা না হলেও বয়স পাঁচের কম হলে হেডফোন ব্যবহার করতে না দেয়াই ভালো। শিশুদের জন্য ইয়ারফোনের চেয়ে হেডফোন ভালো, কারণ ইয়ারফোনের শব্দ সরাসরি ইয়ারড্রামে পৌঁছে। এতে ঝুঁকি আরো বেশি। এছাড়া ইয়ারফোনের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণও হতে পারে।