দেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) আছে মাত্র ১১২টি। এ ধরনের প্রত্যেকটি আইসিইউতেই ভেন্টিলেটর রয়েছে। তাহলে ১১২টি আইসিইউর সাথে ১১২টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। আইসিইউতে মুমূর্ষু রোগীদেরই রাখা হয়। আবার হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট বা এইচডিইউ নামে আরেক ধরনের ইউনিট থাকে হাসপাতালে। এখানে সাধারণত আইসিইউর চেয়ে একটু কম গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এইচডিইউর সবটিতে ভেন্টিলেটর থাকে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: সানিয়া তাহমিনা জানিয়েছেন, আইসিইউর সাথে ডায়ালাইসিস করার সুবিধাও থাকে। বাংলাদেশে এ ধরনের ৪০টি ডায়ালাইসিস সুবিধা রয়েছে ১১২টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা: আয়েশা আক্তার জানিয়েছেন, শুধু কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য সারা দেশে যে ১১২টি আইসিইউ রয়েছে তার ৭৯টি রয়েছে রাজধানী ঢাকাতে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ৬৮টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১১টি। আইসিইউগুলোর মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭টি, কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে ২৫টি, মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ রয়েছে। বেসরকারিভাবে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর মিলে রয়েছে ছয়টি এবং সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে রয়েছে পাঁচটি।
ঢাকার বাইরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো আইসিইউ নেই কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য। সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ৩৩টি। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬টি, সিলেট বিভাগে দুইটি এবং খুলনা বিভাগে রয়েছে পাঁচটি। এগুলো রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
চীনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা: মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তদের ২০ শতাংশের শ্বাসকষ্ট থাকে এবং এদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ করোনা আক্রান্তকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হলে এরা সুস্থ হয়ে উঠেন। অবশিষ্ট ৫ শতাংশ রোগীর আইসিইউসহ ভেন্টিলেটর সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব বয়সীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বেশির ভাগেরই আইসিইউ প্রয়োজন হয়ে থাকে। এ বয়সীদের প্রায় সবারই অন্যান্য রোগ থাকে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পাঁচ শতাংশে আক্রান্তের যদি ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয় তাহলে ১১২টি আইসিইউর ভেন্টিলেটরে মাত্র ১১২ জন আইসিইউর রোগীকে সেবা দেয়া যাবে। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে কমপক্ষে তিন হাজার ৪০০ আইসিইউ প্রয়োজন। সেই তুলনায় বাংলাদেশে বর্তমানে যে আইসিইউ রয়েছে তা খুবই সামান্য।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বিবেচনায় আমরা উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি, তা ধরে নিয়েই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা যদি আমাদের পাশের দেশগুলোর সাথে নিজেদের তুলনা করি, তাহলে দেখতে পাব বাংলাদেশে এমনিতেই আইসিইউ বা ভেন্টিলেটরের পরিমাণ কম। পাশের দেশগুলোতে জনসংখ্যা অনুপাতে যে আইসিইউ রয়েছে তা আমাদের চেয়ে বেশি। আমাদেরও উচিত আইসিইউ ব্যবস্থাপনা বাড়ানো। তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তথ্য অনুসারে, আমাদের ৫৫০ ভেন্টিলেটর থাকলেও দেশবাসী জানতে চায় এর মধ্যে কতগুলো ইনভেসিভ ও নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর আছে? কারণ যে ৫ শতাংশ মানুষের ভেন্টিলেটর প্রয়োজন এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হবে। আর ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর প্রয়োজন এক-তৃতীয়াংশের। কারণ করোনাভাইরাসের আক্রান্তদের যে ৫ শতাংশের ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হবে এদের এক তৃতীয়াংশ নিজে নিজে অক্সিজেন নিতে পারবেন না। তাদের মেশিনের মাধ্যমে ‘ফোর্স’ প্রয়োগ করে অক্সিজেন দিতে হবে। তাহলেই এরা মৃত্যু থেকে বেঁচে যাবেন। তিনি বলেন, সাধারণত যেসব বয়স্ক মানুষের দুর্বল হার্ট রয়েছে, ডায়াবেটিস রয়েছে, কিডনি বিকল অথবা কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তাদের ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হবে। বয়স্ক লোকদের বাঁচাতে এ কাজটি করতেই হবে।