জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত আগামী অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেটে মহামারী করোনা মোকাবিলায় যেকোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্পিকার শিরীন শারমিনের সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপে নড়বড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। বিশেষ করে দেশে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কোটি কোটি মানুষ।
এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বর্তমানে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরপরও জরুরি চাহিদা মোকাবেলার জন্য এই থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয় নতুন বাজেটে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বিশেষায়িত আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে ১৪টিসহ প্রতিটি জেলা শহরে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল স্থাপন ও চালু করা হয়েছে। করোনা রোগ নির্ণয়ের জন্য এ পর্যন্ত ৫৫টি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠাকে আধুনিকীকরণ ও উন্নততর সেবা প্রদান প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হচ্ছে। এর জন্য আমরা জরুরিভিত্তিতে স্বাস্থ্যখাতে ৫২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছি। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুজনিত কারণে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানীবাবদ ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে দুই হাজার ডাক্তার এবং ছয় হাজার নার্স নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে ৩৮৬ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, দুই হাজার ৬৫৪ জন ল্যাব অ্যাটেন্ডেন্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া রাজস্ব খাতে ১২০০ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, ১৬৫০ মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান এবং ১৫০ কার্ডিওগ্রাফার সর্বমোট তিন হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ যাচাইয়ের জন্য একটি স্ক্রিনিং অ্যাপ এবং এ ভাইরাস কমিউনিটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জাতীয় কোভিড-১৯ ডিজিটাল সারভেইল্যান্স সিস্টেম প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই সাথে করোনা মোকাবেলায় দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণে এক হাজার ১২৭ কোটি খরচে একটি এবং অন্যটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে এক হাজার ৩৬৬ কোটি খরচে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।
তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এটা দ্বিতীয় বাজেট।