করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে পূর্ণকালীন চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে ১৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, ২০২০ সালের জুলাই-ডিসেম্বরের মধ্যে কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে মোট কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। ফলে বিশ্বব্যাপী এ বিপুলসংখ্যক শ্রমিক তাদের চাকরি হারাবেন।
আইএলও জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে যে প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তা ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকটকেও ছাড়িয়ে যাবে। কর্মঘণ্টা বা চাকরি হারানোর মারাত্মক ক্ষতির শিকার হবে আরব অঞ্চল। আইএলওর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরব রাষ্ট্রগুলোয় কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে ৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা ৫০ লাখ পূর্ণকালীন চাকরির সমান। অন্যদিকে ইউরোপে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি হারাবে ১ কোটি ২০ লাখ পূর্ণকালীন চাকরিরত শ্রমিক। এছাড়া এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। ফলে এ দুই অঞ্চলে পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে হতে পারে ১২ কোটি ৫০ লাখ শ্রমিককে। বিভিন্ন আয়সীমার জনগোষ্ঠীকেই ভয়াবহ এ ক্ষতির শিকার হতে হবে। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় ধাক্কা সামলাতে হবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে। এসব দেশে ৭ শতাংশ কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার বিপরীতে চাকরি হারাতে হতে পারে ১০ কোটি মানুষকে।
আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ব্যবসা ও শ্রমিকরা অভাবনীয় বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল কোনো অর্থনীতিই এ বিপর্যয়ের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে খুব দ্রুত এবং অবিচলভাবে এগিয়ে যেতে হবে। সঠিক ও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়েই আমরা হয়তো এ বিপর্যয় এড়াতে পারব। না হলে অর্থনীতিসহ বৈশ্বিক অবকাঠামো ভেঙে পড়া রোধ করা যাবে না।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে আবাসন ও খাদ্য পরিষেবা, ম্যানুফ্যাকচারিং, খুচরা বিক্রি এবং ব্যবসা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। এছাড়া বৈশ্বিক পর্যটন খাতেও কভিড-১৯-এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় ২০২০ সালে বৈশ্বিক বেকারত্ব বৃদ্ধি নির্ভর করছে রোগটির ভবিষ্যৎ বিস্তার এবং তা রোধে গৃহীত নীতি ও পদক্ষেপের ওপর।
‘এলএলও মনিটর সেকেন্ড এডিশন: কভিড-১৯ অ্যান্ড দি ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক’ শীর্ষক আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে এর আগে সংস্থাটির পক্ষ থেকে নভেল করোনাভাইরাসজনিত অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সারা বিশ্বে আড়াই কোটি লোক কর্মসংস্থান হারাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বছর শেষে এ সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র আংশিক কিংবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে বিশ্বের মোট শ্রমশক্তির চার-পঞ্চমাংশের (৮১ শতাংশ) ওপর কভিড-১৯-এর প্রভাব পড়েছে। নতুন গবেষণা অনুযায়ী, ১২৫ কোটি মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ এমন সব খাতের সঙ্গে যুক্ত আছে, যেগুলো ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি আরো বেশি বেতন ও কর্মঘণ্টা হ্রাসের দিকে ঝুঁকছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বহু মানুষ নিম্ন মজুরি ও স্বল্প-দক্ষ খাতের চাকরিতে যুক্ত আছেন। এসব খাতে হঠাৎ করেই আয় বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে। বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল ও উঠতি অর্থনীতির দেশগুলোয় অনানুষ্ঠানিক খাতে যুক্ত ২০০ কোটি মানুষ এ ঝুঁকিতে রয়েছে।
রাইডার বলেন, গত ৭৫ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য এ হলো সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনো একটি দেশ ব্যর্থ হলে আমরা সবাই ব্যর্থ হব। ফলে বৈশ্বিক সমাজকে রক্ষায় ও সহযোগিতায় আমাদের সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর দিকে, যারা নিজেরা এ দুর্যোগ সামাল দেয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। সূত্র : বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড