চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর গ্রামে এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা: এএসএম মারুফ হাসান। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি তথ্য গোপন করে তিন দিন নিজ গ্রামে স্বাভাবিক চলাফেরা করেছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। সোমবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আক্রান্তের তথ্য গোপন করে গ্রামটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলায় পরিবারের সদস্যদের বিচারের দাবি তোলেন অনেকে। যদিও আক্রান্ত ব্যক্তির ছেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় তার বাবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় ডিসিআর থেকে আমাদের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িসহ গ্রামের শতাধিক বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলি হোসেন জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের ওই ব্যক্তি বেশ কিছুদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পরিবারের সদস্যরা গত ৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা ১৩ এপ্রিল ঢাকার কিডনি হাসপাতালে ভর্তি করান।
আক্রান্ত ব্যক্তির ছেলে (একজন চিকিৎসক) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছেন, ঢাকাতে কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বাবার ঠাণ্ডা, সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হন। করোনা শনাক্তের জন্য অনেক চেষ্টার পর ১৫ এপ্রিল ঢাকার আইইডিসিআরে তার বাবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাবা কিছুটা সুস্থ হলে দুই দিন পর (১৮ এপ্রিল) আমরা নিজ গ্রামে ফিরে আসি।
ওই চিকিৎসক ছেলের দাবি, সোমবার সন্ধ্যায় আইইডিসিআর থেকে ফোন করে আমার বাবা করোনা পজেটিভ জানানো হয়। ফেসবুক বার্তায় তিনি উত্তেজিত গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ঢাকা থেকে আসার পর তার বাবাকে তারা নিজ বাড়িতেই রেখেছিলেন। কঠিন সঙ্কটে সবাইকে সহমর্মিতা নিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, গোটা বিষয়টি আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার গোপন করেছেন। গত তিন দিন ধরে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজ গ্রামে সাধারণ মানুষজনের সাথে অবাধে মিশেছেন, চলাফেরা করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হলে জনরোষ এড়াতে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসক ছেলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ক্ষমা চান।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রাতেই সিভিল সার্জনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে ওই এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
রাতে সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ টিমকে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিবেন। যদি আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ থাকেন তাহলে তাকে নিজ বাড়িতেই প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করে চিকিৎসা দেয়া হবে। আর বেশি অসুস্থ হলে তাকে ঢাকাতে রেফার্ড করা হবে।
উল্লেখ, চুয়াডাঙ্গাতে গত ১৯ মার্চ ইতালিফেরত এক যুবক প্রথমবারের মত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৫ দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরেন।