এতোদিন শেয়ারবাজার বন্ধ থাকা খুবই কষ্টকর। সব ধরণের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতো দিন বাজার বন্ধ থাকা একটি খারাপ অভিজ্ঞতা। তাই ক্ষতিগ্রস্ত এই বাজারকে দাঁড়াতে লেনদেনের দশমিক ০৫ অর্থাৎ ৫ পয়সা হারে যে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দিতে হয়, সেটা এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ মওকুফ করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাজার খোলার পর বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কথা ভাবতে বলবো। তারাও খুব ক্ষতিগ্রস্থ। তাদের ব্যাপারেও এবং ব্রোকার কমিউনিটি বা ট্রেকহোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ অন্যান্য যারা আছেন, তাদেরকে স্বল্প সুদে ও স্বল্প মেয়াদে একটা আর্থিক সাহায্য বা প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, বাস্তবতার দিকটাও আমাদের চিন্তা করা দরকার। উন্নত বিশ্বের সাথে আমাদের কিছুটা কারিগরি পার্থক্য আছে। উন্নত বিশ্বের স্টক মার্কেট সম্পূর্ণ অটোমেটেড মার্কেট এবং অনলাইন প্লাটফর্মভিত্তিক মার্কেট। সেখানে মোবাইল অ্যাপসগুলো অনেক কার্যকরী। যেমন সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ পুরো লেনদেন মোবাইলে হয়। সেখানে একটি ইন্টিগ্রেট সিস্টেম আছে এবং একক সত্ত্বা হিসেবে কাজ করে। এই সিষ্টেমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সিডিবিএল, সিসিবিএল সবাই সম্পৃক্ত। তবে আমাদের সত্ত্বাগুলো ভিন্ন। ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যদি বন্ধ থাকে, আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়। আবার সিডিবিএলও পাশাপাশি বন্ধ থাকে। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে চালু রাখাটা কিছুটা কষ্টকর বিষয়।
এদিকে দেশের লকডাউন পরিস্থিতি, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি, নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবসহ বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেয়া বা অফিসের কর্মচারী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টাও প্রাধান্য পাবে বলে জানান ডিএসইর পরিচালক। তার প্রশ্ন, সরকার যদি ছুটি আরো বাড়ায়, সেক্ষেত্রে আমরা কি করব? এখন পর্যন্ত ডিএসইর বোর্ডের সিদ্ধান্ত সরকারের ছুটি যদি বৃদ্ধি পায় দুঃখজনক হলেও এটার বাস্তবতায় আমাদের লেনদেনটা বন্ধ থাকবে। তবে কমিশন অফিস খোলা রাখলে, সেক্ষেত্রে ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসইর পরিচালক জানান, আমরা ব্রোকাররা অনেক খারাপ অবস্থায় আছি। ২০১৯ সাল থেকেই আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। লেনদেন কমায় আয় কমেছে। আমরা প্রত্যকেই লোকসানে ব্যবসা করছি। আর এই করোনাকালীন সময়তো আমাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ খারাপ। এপ্রিল মাসে আমাদের আয় হবে শূণ্য। অথচ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে। শেয়ারের দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা (যে দরের নিচে নামতে পারবে না) বেধে দেয়ার কারণে লেনদেন এক ধরনের বন্ধ অবস্থায় আছে বলে ডিএসইর পরিচালক জানান। তিনি বলেন, এ অবস্থায় অফিস খুললেও খুব একটা আয় রোজগার হবে না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শিল্প, রপ্তানী বাণিজ্য, সেবা খাত বিশেষত পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধস নেমেছে। ফলে এসব খাতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট হতে উত্তরনের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি প্রণোদনা পাকেজ ঘোষনা করেছে। আশা করা যাচ্ছে এতে দেশের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে। প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারে বিশ্বব্যাপী বিগত কয়েক সপ্তাহে ২৮ থেকে ৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে বলেও জানিয়েছেন। যার বাইরে নয় বাংলাদেশের শেয়ারবাজারও। তাই শেয়ারবাজারের স্বার্থে এই মুহুর্তে সরকারের কাছ থেকে অন্যান্য খাতের মত প্রণোদনা বা আর্থিক সাহায্য দরকার।
মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ব্রোকার কমিউনিটি বা ট্রেকহোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ অন্যান্য যারা আছেন, তাদেরকে স্বল্প সুদে ও স্বল্প মেয়াদে একটা আর্থিক সাহায্য বা প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অুনরোধ করছি। তবে যদি ভবিষ্যতে আয় রোজগার করে ভালো অবস্থায় হলে, অবশ্যই সে টাকা ফেরত দেয়ার কথা তিনি জানান। তিনি বলেন, একটি আর্থিক সহযোগীতা খুবই জরুরী প্রয়োজন। বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে একটু স্বল্প সুদে সরকার এ মুহূর্তে কিছু আর্থিক সহযোগিতা দিতে পারে। দিন শেষে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার দিকটাও চিন্তা করতে হবে।