করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য করা তালিকায় ২২ লাখ ৮৬ হাজার ৫২৮ জনের তথ্যে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির জন্য করা তালিকায় এ অসঙ্গতি পাওয়া যায়। আর এসব উপকারভোগীদের তথ্য সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অবস্থানপত্রে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
অবস্থানপত্রে বলা হয়েছে, মুজিববর্ষে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রদান কর্মসূচি নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে উপকারভোগীর তথ্য সংগ্রহ করে একটি তালিকা অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়। অর্থ বিভাগ সে তালিকা যাচাই-বাছাই করে যোগ্য বিবেচনায় মোট ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৫৬ জনকে এরইমধ্যে নগদ অর্থ পাঠিয়েছে এবং ২ লাখ ১ হাজার ৭৩১ জনের অর্থ দেওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
তবে বিভিন্ন যাচাই-বাছাইয়ে পর অসঙ্গতি থাকায় ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০০ জনের তথ্য পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া যে ২২ লাখ ৮৬ হাজার ৫২৮ জনের অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়, সে বিষয়ে গত ১৫ জুন জুম প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (২) মো. আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এসব উপকারভোগীর তথ্য সংশোধনের জন্য সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছে তালিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্যের বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে নিবন্ধন করা মোবাইল নম্বর না থাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে নিবন্ধন করা মোবাইল নম্বর অর্থ সহায়তার জন্য দেওয়া মোবাইল নম্বর থেকে ভিন্ন, জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের নম্বর ও প্রদত্ত জন্মতারিখ নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে রাখা তথ্যের সঙ্গে মিল না থাকা, পেশা হিসেবে গৃহিণী-বস্তিবাসী-বিধাব বা স্বামী পরিত্যক্তা উল্লেখ থাকা যা সুনির্দিষ্ট পেশা নয়, মোবাইল নম্বর ১১ ডিজিটের কম বা বেশি দেওয়া।
তবে মাঠ পর্যায় থেকে এসব অসঙ্গতি সংশোধন করা হলে সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ থেকে কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে- উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে নিবন্ধন করা মোবাইল নম্বর চিহ্নিত করা, উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের নম্বর ও জন্ম তারিখ ভালো করে যাচাই, মোবাইল নম্বরটি ১১ ডিজিটের সঠিক ফরমেটে লিপিবদ্ধ করা, উপকারভোগীর সঠিক সঠিক পেশা সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা ইত্যাদি।
নাম না প্রকাশ শর্তে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ৫০ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পবিবারকে নগদ আর্থিক সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তালিকায় যেসব অসঙ্গতি পাওয়া গেছে সেগুলো সংশোধনের জন্য উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। উপকারভোগীদের হাতে সরাসরি সহায়তার অর্থ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে।
এসব প্রক্রিয়া শেষ হলে তালিকাভুক্ত যারা এখনো নগদ সহায়তা পাননি তাদের অর্থ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।