করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের দাফন-কাফন/সৎকারের জন্য নিয়োজিতদের প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দাফন-কাফন কাজে নিয়োজিত (স্বেচ্ছাসেবকহ) ব্যক্তিদের করোনাভাইরাস এর সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। দেশের সব জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে সংশ্লিষ্টদের সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিতব্য এই ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করবেন। সংশ্লিষ্টদের কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান করে এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করে সিভিল সার্জনদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. গানিয়া তাহমিনা ঝোরা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি দেশের সব সিভিল সার্জন বরাবর পাঠানো হয়। একই চিঠি দেয়া হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল জেলা উপ-পরিচালক, আল-মারকাজুল ইসলামীর চেয়ারম্যান ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানকে।
চীনের উহান থেকে করোনাভাইাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ এই ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৭০ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১২৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শুধু জীবিত ব্যক্তিই নন, মৃত ব্যক্তির লাশ থেকেও এই ভাইরাসটি ছড়ায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
এই অবস্থায় মৃত ব্যক্তিদের যথাযথ নিয়ম মেনে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা নিয়ে বাংলাদেশেও এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। কোনো কোনো এলাকায় কবরস্থানে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন না করার জন্য ব্যানারও টানিয়ে এবং বাধাও দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। শরীয়তপুরে মৃত ব্যক্তির দাফন করতে স্বজনরাও অনীহা প্রকাশ করে। ফলশ্রুতিতে স্থানীয় পুলিশ এই ব্যক্তির দাফন কাফনের ব্যবস্থা করে।
এই অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দাফন-কাফন/সৎকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) সাইফুল্লাহিল আজমকে ফোকাল পয়েন্ট এবং আরেক যুগ্ম সচিব ড. মো. এনামুল হককে (বাজেট) বিকল্প ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগ করেন। একই সাথে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে করোনাভাইরাসে মৃতদের দাফন-কাফনের জন্য কমপক্ষে ১০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচন করতেও দেশের সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়, করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফন তথা সৎকারের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কমপক্ষে ১০ জন (৩জন মহিলাসহ)ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আল-মারকাজুল ইসলাম। করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, দাফন কাফন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘কোভিড-১৯ রোগে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ প্রার্থীরা নিজ নিজ জেলায় সিভিল সার্জনের অফিস থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দাফন-কাফন/সৎকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য নিযুক্ত সরকারের ফোকাল পয়েন্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) সাইফুল্লাহিল আজম এ ব্যাপারে নয়া দিগন্তকে জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ভিডিও কনফারেরেন্সের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্য বিধি মেনে কীভাবে দাফন-কাফন করানো হবে সেজন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এতে প্রতি জেলা-উপজেলায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকরাসহ (১০ জন করে) সংশ্লিষ্টরা অংশ নেবেন। প্রশিক্ষণ দেবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আল-মারকাজ ইসলামী ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।