করোনা সংকটের ফলে মৃত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে স্পেনে বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে। ফেডারেল সরকার গোটা দেশে একমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড মেনে মৃতের সংখ্যা গণনার নির্দেশ দিয়েছে।
করোনা সংকটের ক্ষেত্রে একটি বিষয় নিয়ে সংশয় দূর করা কঠিন। যে কোনো দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা মৃত মানুষের সংখ্যা কতটা নির্ভরযোগ্য, সে বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
প্রথমত, যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পরীক্ষা করলে তবেই প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব। পরীক্ষার মান, কোন পর্যায়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে, এমন সব বিষয়ও বিচার করা জরুরি। মৃতের সংখ্যার ক্ষেত্রেও নানা কারণে এমন অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে। ঠিক সময়ে শনাক্ত না করতে সংক্রমণের হার যে মারাত্মক হারে বেড়ে যেতে পারে, ইউরোপে ইতালি ও স্পেনের মতো দেশে তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে।
স্পেনের সরকার এ ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি এড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতার বণ্টনের প্রেক্ষাপটে এতকাল দেশজুড়ে মৃতদের সংখ্যা নির্ধারণের কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ড ছিল না। শুক্রবার ফেডারেল সরকারের এক গেজেটের মাধ্যমে দেশের ১৭টি স্বশাসিত অঞ্চলের কর্তৃপক্ষকে করোনা মহামারির কারণে মৃত মানুষের সংখ্যা গণনার সাধারণ মানদণ্ড চালু করার নির্দেশ দিয়েছে।
স্পেনের ফেডারেল সরকার জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই যে সব মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, একমাত্র তাদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে সরকারি তালিকায় হিসেব রাখা হবে। মৃত্যুর আগে কোনো মানুষের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গিয়েছিল কিনা, সেটা বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না।
স্পেনে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৯০ হাজারের বেশি। মৃত্যুর আগে যেসব মানুষের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গেলেও পরীক্ষা করা হয় নি, তাদের সংখ্যা ধরলে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে বাধ্য।
যেমন স্পেনের উত্তর পূর্বে কাটালুনিয়া অঞ্চলে চলতি সপ্তাহের শুরুতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার ৭০০। তবে একমাত্র হাসপাতালে পরীক্ষা চালিয়ে তাদের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছিল। বৃদ্ধাশ্রম বা বাসায় পরীক্ষা করে করোনা ধরা পড়লে সরকারি হিসেবের তালিকায় মৃতদের স্থান হয়নি। ফলে অন্তেষ্ট্যির সময় হিসেব মেলেনি। একই সময়কালে আরও প্রায় ৩ হাজার ২০০ মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সন্দেহ থেকে গেছে।
স্পেনের হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি কাটছে না। রাজ্য সরকারগুলোর হিসেব অনুযায়ী এগারো হাজারের বেশি মানুষ হয় করোনা ভাইরাস বা তার উপসর্গের কারণে মারা গেছেন। কিন্তু প্রত্যেকটি রাজ্যে হিসেবের মানদণ্ড ভিন্ন হওয়ায় সেই সংখ্যার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ডয়চে ভেলে।