করোনা সংক্রমণে সকল রোগীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি সমান নয়। বেশিরভাগ মানুষই সুস্থ হচ্ছেন কোনোরকম জটিলতা ছাড়াই। কিছু রোগী চলে যাচ্ছেন গুরুতর পর্যায়ে। গুরুতর পর্যায়ের রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে আগে থেকে গেড়ে বসা কিছু রোগ করোনা রোগীদের জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায় অথবা গুরুতর পর্যায়ে নিয়ে যায়। বয়স্ক মানুষ, হার্টের রোগী, ফুসফুসের রোগী, দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষ, লিভারের রোগী, কিডনির রোগী ও ডায়াবেটিস রোগীরা করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় আছেন।
করোনা সংক্রমণে মৃত্যু এড়াতে কোন রোগীদের অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন তা জানতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কাজ করে চলেছেন। সম্প্রতি তেমন একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, রক্তে ‘করটিসল’ নামক স্ট্রেস হরমোনের উচ্চমাত্রা করোনা রোগীদেরকে গুরুতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। এ পর্যায়ে মৃত্যুর ঝুঁকি সর্বোচ্চ। গবেষণাটি দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়েছে।
এ গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা আশাবাদী যে রক্তে করটিসলের মাত্রা দেখেই কোনো রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি বা কম তা পূর্বানুমান করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, খুব উচ্চমাত্রার করটিসল করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি সর্বোচ্চ করতে পারে। এ গবেষণায় লন্ডনের হাসপাতালে ভর্তিকৃত ৫৩৫ জন রোগীর রক্ত পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এদের ৪০৩ জন ছিলেন করোনা রোগী। দেখা গেছে, করোনা রোগীদের রক্তে করটিসলের মাত্রা বড় সার্জারির রোগীদের চেয়েও তিনগুণ বেশি ছিল। সাধারণত সার্জারিতে করটিসলের মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।
যেসব করোনা রোগীর রক্তে খুব উচ্চমাত্রায় করটিসল পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ ছিল। এমনকি এ গ্রুপের মধ্যে জটিলতাও বেশি দেখা গেছে এবং সুস্থ হতেও বেশি সময় লেগেছে। গবেষকদের মতে, একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় করটিসলের মাত্রা শনাক্ত করে কিছু রোগীদের জরুরি মেডিক্যাল সেবা দেয়া সম্ভব হবে, যার ফলে তাদের জীবন রক্ষা পাবে।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের মেটাবলিজম, ডাইজেশন অ্যান্ড রিপ্রোডাকশনের অধ্যাপক ওয়ালজিত ধীলু বলেন, ‘যখন রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হন তখন আমরা রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা দেখে বিবেচনা করি যে কাকে দ্রুত জরুরি মেডিক্যাল সেবা দিতে হবে। এখন আমরা এটা বিবেচনা করার জন্য আরেকটি সাধারণ মার্কার পেয়েছি। এটা হলো রক্তে করটিসলের মাত্রা।’