৪ সপ্তাহ ধরে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে কুড়িগ্রামের আড়াই শতাধিক চরাঞ্চলের ৩ লক্ষাধিক মানুষ।
হাতে কাজ ও ঘরে খাবার না থাকায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা। প্রকট হয়ে উঠছে শিশু ও গো খাদ্যের সংকট। বন্যা কবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ।
বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে চরাঞ্চলগুলোতে তলিয়ে যাওয়া ঘর-বাড়ির বেশির ভাগ বাসিন্দা প্রথম দফা বন্যা থেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে নৌকায় বাস করছে। কিছু কিছু পরিবার চৌকি ঘরের চালে ঠেকিয়ে কষ্ট করে দিন যাপন করছে। আর স্বল্প সংখ্যক পরিবার যাদের ঘর-বাড়ি নদ-নদীর কিনার ঘেঁষা তাদের ঘরে থাকার অবস্থা না থাকায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে উঁচু বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এ অবস্থায় যারা দীর্ঘ ২৭ দিন ধরে নৌকায় ও ঘরের ভিতর পানির মধ্যে বসবাস করছে তারা খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নলকুপ তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট তীব্র। আর যারা বিভিন্ন পাকা সড়ক, উঁচু বাঁধে পলিথিনের তাবু টানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছে- তারাও খাদ্য, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর এলাকার ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন জানান, তার নিজের বাড়িও দীর্ঘ ২৭/২৮ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। তার ওয়ার্ডে মোট পরিবারের সংখ্যা সাড়ে ৩শ। এই পরিবারগুলোর মধ্যে মাত্র ৫০টি পরিবারকে সরকারি খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকী পরিবারগুলো এখনও সরকারি-বেসরকারি কোন খাদ্য সহায়তা পায়নি। বন্যা দুর্গতরা সকলেই ভীষণ কষ্টে আছে।
অন্যদিকে তিস্তার প্রবল স্রোতে রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় ক্রস বাঁধের এক পাশের মাটি ধসে পার্শ্ববর্তী ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, চলতি বন্যায় জেলার ৯ উপজেলায় পানিতে ভেসে গেছে জেলার ২০৭৩টি পুকুরের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যার্তদের জন্য ৯ উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য ২ লাখ প্যাকেট, গো খাদ্য ২ লাখ প্যাকেট ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।