প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রায় এক মাস হয়ে গেল ঘুরছে না গাড়ির চাকা, এতে অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছেন খুলনা অঞ্চলের পরিবহন শ্রমিকরা।
তাদের অভিযোগ, শ্রমিকদের কল্যাণের নামে পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর তহবিলে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা জমা হলেও সে তহবিল থেকে শ্রমিকরা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। তাদের প্রশ্ন এসব টাকা যাচ্ছে কোথায়?
শ্রমিকদের একাধিক সূত্র মতে, মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নাম ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পরিবহন খাতে চাঁদাবাজী অনেকটা ‘ওপেন-সিক্রেট’।
খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস মালিক সমিতির আওতাভুক্ত খুলনার সোনাডাঙ্গাস্থ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় তিন শতাধিক গাড়ি দেশের বিভিন্ন রুটে ছাড়তো। এ রুটগুলো থেকে প্রতিদিন মালিক সমিতির নামে প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকার মতো চাঁদা আদায় করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। সে হিসেবে এ রুটগুলো থেকে মাসে ৫০ লাখ টাকার বেশি টাকা চাঁদা আদায় হতো।
রূপসা-বাগেরহাট বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নামে ১২টি রুটে দুই শতাধিক বাস চলাচল করে। এ রুটগুলো থেকে প্রতিদিন মালিক সমিতির নামে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা এবং মাসে ১২ লাখের বেশি টাকা চাঁদা আদায় হতো।
খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতি নামে প্রতিদিন সমিতি ও স্ট্যাটারদের চাঁদাসহ ১৫-২০ হাজার টাকা আদায় করতো। সে হিসেবে মাসে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা এ রুটগুলো থেকে আদায় করা হতো।
খুলনা মহানগরীতে বেবিট্যাক্সি চালকদের দুটি ইউনিয়ন প্রতিদিন ৯-১০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করতো। সে হিসেবে মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা আদায় করা হতো।
ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে ১০-২০ টাকা হারে প্রতিদিন অন্তত ৮০ হাজার টাকার মতো চাঁদা আদায় করা তো। সে হিসেবে মাসে ২৪ লাখ টাকা আদায় হবার কথা।
সব মিলিয়ে খুলনার পরিবহন খাতগুলোতে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া রয়েছে এ অঞ্চলের বৃহৎ শ্রমিক সংগঠন খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন। এ সংগঠনের ‘আয়’ সবচেয়ে বেশি বলে প্রচলিত রয়েছে এবং সম্প্রতি অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি গণমাধ্যমে আলোচিতও হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আবুল হোসেন কার্ফুর বিরুদ্ধে সংগঠনের প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
যোগাযোগ করা হলে খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বক্স দুদু বলেন, ‘আট হাজার শ্রমিকের মধ্যে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আগে সাড়ে ২৪ টন চাল দিয়েছি। পরে আবার সিটি মেয়য়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ২৪ টন চাল দিলাম। এভাবেই শ্রমিকদের পাশে আছি।’
খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং খুলনা পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সভাপতি আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাস বলেন, ‘শ্রমিকদের সহায়তা করছি। তবে সমষ্টিগতভাবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে যা পারছি, করছি।’
খুলনা জেলা বেবিট্যাক্সি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস মালিক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, ‘কোনো শ্রমিক না খেয়ে নেই।’ যদি কেউ না খেয়ে থাকে, তবে তাকে জানালে তিনি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিবেন সেই শ্রমিকের বাসায়, বলেন তিনি।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে পরিবহন বন্ধের পর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দায়সারা খোঁজ-খবর নিয়েছেন অভিযোগ করে শ্রমিকরা বলছেন, তারা কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি। সরকারি কিছু চাল সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের মাঝে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তারা।
শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে শ্রমিকদের নগদ কোনো অর্থ দেয়া হয়নি অভিযোগ করে তারা জানান, প্রভাবশালীদের হয়রানির ভয়ে এসব নিয়ে প্রতিবাদেরও সাহস নেই তাদের।
খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রথম অবস্থায় প্রায় ২০০ বস্তা চাল দিছি। এখনো দু/তিন দিন পর পর টার্মিনাল কেন্দ্রিক শ্রমিকদের দু’দশ বস্তা করে চাল বিতরণ করতেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে এ শ্রমিক নেতা বলেন, ‘প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক আছে। এতো শ্রমিককে তো আর নগদ টাকা দেয়া সম্ভব না।’
সূত্র : ইউএনবি