গতি বাড়িয়ে উপকূলের কাছে চলে এসেছে ‘অতি মারাত্মক’ ঘূর্ণিঝড় আমফান। সকাল ১১টায় আমফানের অবস্থান ছিল কলকাতা থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে। তখন দিঘা থেকে ১৫০ কিলোমিটার এবং পারাদ্বীপ থেকে ১২০ কিমি দূরে ছিল এই ঘূর্ণিঝড়। গত ছয় ঘণ্টায় ২২ কিমি বেগে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অভিমুখে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসছে আমফান।
ভারতের আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সূত্রে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘সুপার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ থেকে আমফান এখন ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়র সাইক্লোনিক স্টর্ম’-এ পরিণত হয়েছে। কিছুটা শক্তি হারালেও এখন ‘অতি মারাত্মক’ চেহারা নিয়েই দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যবর্তী কোনো অঞ্চলে আজ বুধবার বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতীয় আবহবিজ্ঞানীদের অনুমান, সাগরদ্বীপ হয়ে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে আছড়ে পড়তে পারে আমফান। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দুই ২৪ পরগনাতেও তা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। সেই সাথে হবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসও। এই তিন জেলার উপকূলে চার থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
আমফান আছড়ে পড়ার সময় ঘূর্ণনের গতিবেগ হতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। এমনকি, এই গতিবেগ বেড়ে তা পৌঁছতে পারে ১৮৫ কিলোমিটারের আশপাশে। আমফানের ঝাপটায় কলকাতা, হুগলি, হাওড়া এবং নদিয়াতেও বেশ ভালোই প্রভাব পড়বে। কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এমনকি, তা বেড়ে ১৩০ কিলোমিটারও হতে পারে। সেই সাথে দোসর হবে প্রবল বৃষ্টি।
ইতিমধ্যেই আমফানের প্রভাব পড়েছে উড়িষ্যার পারাদ্বীপ সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পারাদ্বীপে প্রতি ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইছে।
এদিকে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর সবশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২০০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১৪০-১৬০ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।