লালমনিরহাট খামারগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। ভাইরাসজনিত এ রোগের কারণে গরুর ওজন অনেক কমে যায়। এ রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় গরু নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা।
প্রাণি সম্পদ দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মশা, মাছি, মাইটের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত গরুর দুধ, লালা থেকেও ছড়ায়। এছাড়া, আক্রান্ত গরু স্থানান্তর, চিকিৎসকের ব্যবহারিত সিরিঞ্জ এমনকি গরু পরিচর্যাকারীর মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে।
রোগের উপসর্গ, চিকিৎসা, রোগ নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ ও প্রতিরোধে নানা নির্দেশনা দিয়ে লিফলেট বিতরণ করছে প্রাণি সম্পদ অফিসগুলো।
লাম্পি স্কিন ডিজিজের সঠিক কোনো চিকিৎসা না থাকলেও লালমনিরহাটে দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে নানা ওষুধ। ১০ টাকার এমোক্সাসিলিন ৩০ টাকা, ১০ টাকার টাফনিল ৩০ টাকা, কিটোপ্রফেন ৩০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে খামারিদের। যদিও প্রাণি সম্পদের লিফলেটে কিটোপ্রফেন ও এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোনো নিয়মনীতি না মেনে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব ওষুধ।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ নিয়ে কথা হয় ৫ উপজেলা লাইভ স্টক অফিসার (ইউএলও) ডা. মো. আব্দুল আজিজ খানের সঙ্গে। তিনি জানান, পাটগ্রাম উপজেলায় এই পর্যন্ত ৫০০ এর কাছাকাছি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
ডা. মো. আব্দুল আজিজ খান বলেন, ‘আমরা কিটো-এ ও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার নিষেধ করেছি। দোকানে বিভিন্ন গরুর ওষুধের দাম বেশি রাখা হচ্ছে বলে শুনেছি। আমরা মোবাইল কোর্ট করতে পারি। যারা দুই চার হাজার টাকা করে নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে সেই সব পল্লী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সহায়তায় ব্যবস্থা নিতে পারি।’
করিম শেখ নামে এক খামারি বলেন, ‘সামনে কোরবানির ঈদ। আর কিছু দিন পর গরু বিক্রি করতে হবে। লাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে গরুর ওজন কমে যায়। সারা বছর কষ্ট করে গরু পালছি। এখন বিক্রির সময়। এই রোগের কারণে এবার গরু বিক্রি করে লাভ করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’
হাতিবান্ধায় এ পর্যন্ত ৪৬৫টি পশু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে উপজেলা পশু চিকিৎসক এনামুল হক বলেন, ‘এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি খুব সোজা। নিমপাতার গুড়া, লবণ সোডা দিয়ে চিকিৎসা সম্ভব। আমরা প্রতিদিন কাজ করছি। এই প্রকল্পে যারা আছেন তাদের দিয়ে কমিটি করে সচেতনা বৃদ্ধি করছি।’
আদিতমারী উপজেয়া ৪৪৬টি গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। ইউএলও মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমরা সচেতনতামূলক ১০ হাজার লিফলেট বিতরণ করেছি। সোডা, লবণ, নিম পাতা দিয়ে চিকিৎসায় যথেষ্ট। ১০০ টাকার চিকিৎসায় গরু সুস্থ হবে। ১০ হাজার টাকা ব্যয় বৃথা।’
লালমনিরহাটে ৫৫৩টি গরু আক্রান্ত হয়ে জানিয়ে ডা. সাজিয়া আফরিন বলেন, ‘এই রোগ হলে তা দেখা যাচ্ছে। এই রোগে গরুর মৃত্যু হার এক শতাংশের চেয়েও কম। তবে এটার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নাই। বায়োসিকিউরিটি মেইনটেইন করে নির্মূল সম্ভব। গরুর থাকার জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এটা স্কিনে হয়। স্কিনে রক্ত চলাচল কম তাই সারতে একটু দেরি হয়।’
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘এখন লাম্পির প্রভাবটা অনেকটাই কমে গেছে। তারপরও এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’