1. kaium.hrd@gmail.com : ময়মনসিংহের কাগজ প্রতিবেদক :
  2. editor@amadergouripur.com : Al Imran :
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ময়মনসিংহে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশী অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলা, ২৪ ঘন্টায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইন ছাত্র ফোরাম ময়মনসিংহ জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা।। আহ্বায়ক ফরহাদ, সদস্য সচিব রবিন শেখ হাসিনার শেষ ৫ বছরে ১৬ হাজারের বেশি খুন গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আল-আমিন, সম্পাদক বিপ্লব ময়মনসিংহে ট্রাক সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষ, চালক নিহত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শিমুর বিরুদ্ধে মামলা গৌরীপুরে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি সি ইউ নট ফর মাইন্ড’ খ্যাত সেই শ্যামল গ্রেফতার জুলাই বিপ্লবের কন্যাদের গল্প শুনলেন ড. ইউনূস

গার্মেন্টস খুলে দেওয়া আত্মঘাতী, বিফলে যেতে পারে সব উদ্যোগ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২ মে, ২০২০
  • ১২৬ Time View

করোনা মহামারির মধ্যে গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি তা সমগ্র দেশের জন্য আত্মঘাতী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের যাবতীয় উদ্যোগ বিফলে যেতে পারে বলেও তাদের মত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোশাক কারখানা খোলার সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। গার্মেন্টস হচ্ছে শ্রমঘন একটি শিল্প। অধিকাংশ গার্মেন্টস শ্রমিক কম ভাড়ার ছোট বাসায় থাকেন, যেখানে একই রুমে কয়েকজনকে থাকতে হয়। এছাড়া একাধিক পরিবারকে একই রান্নাঘর এবং বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। করোনা রোধে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটা যেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সেই দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না। ফলে করোনা সংক্রমের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে।

করোনা মহামারি মধ্যে গার্মেন্টস কারখানা খোলা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সিপিবির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স  বলেন, ‘গার্মেন্টস কারখানা খোলার মধ্যে দিয়ে এবং গত মাসের ৪ তারিখ খোলা ও বন্ধ নিয়ে যে নাটক করা হয়েছে, তার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের যেমন ঝুঁকিতে ফেলা হলো, তেমনি ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হলো।’

তিনি বলেন, ‘সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশেষজ্ঞ ও জনস্বাস্থ্যবিদসহ সবার বক্তব্য উপেক্ষা করে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হলো। সবচেয়ে আশংকার বিষয় হচ্ছে- গার্মেন্টস খোলা মানে কিন্তু শুধু গার্মেন্টস খোলা না। এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বিষয়ও খুলে যাওয়া। যেমন- যাতায়াত ব্যবস্থা সচল হলো, এই সুযোগে বাবু বাজারের পাইকারি মার্কেট খুলে গেল, দোকান মালিক সমিতি দোকান খোলা রাখার সময় বাড়িয়ে নিল। ফলে সরকার এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বাসায় থেকে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের কৌশলকে ঝুঁকিতে ফেলে দিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার সাভারে করোনা প্রতিরোধ কমিটি ৩০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে চিঠি দিয়ে পোশাক কারখানা বন্ধ করতে বলে। কিন্তু প্রতিরোধ কমিটির কথা না শোনার ফলে গতকাল আমরা সাভারে বিপুল সংখ্যক আক্রান্তের সংখ্যা দেখতে পেলাম। যদি ব্যাপকভাবে করোনা টেস্ট করা হয়, তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক হবে বলে মনে হচ্ছে।’

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ এ বিষয়ে বলেন, ‘এই দুর্যোগের সময় পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এটা নষ্ট পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চরম দৃষ্টান্ত, যেখানে জীবনের কোনো মূল্য নেই, শুধু মুনাফাটাই বড় বিষয়। যদি সেখানে বড় ধরনের কোনো সংক্রমণ হয়, তাহলে শুধু শ্রমিকরা নয়, সমাজের অন্যান্যরাও আক্রান্ত হবে। যেখানে গার্মেন্টস শিল্প এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এটা জেনেও কারাখানা চালু করা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন বিরোধী।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কারখানা খোলার ফলে বিশ্বের কাছে আমাদের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদি শ্রমিকরা আক্রান্ত না হয় তবুও দেশের সুনাম নষ্ট হয়েছে। গত ২০ থেকে ৩০ বছরে যে লুটেরাশ্রেণি গড়ে উঠেছে দেশে, তাদের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে, জাতীয় স্বার্থের চেয়ে মুনাফাটাই বড়। তাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশের বড় ধরনের ক্ষতি করলেন তারা।’

সিপিডির সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বাংলানিউজে বলেন, ‘ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলো এখন লকডাউন খুলে দেওয়ার ফলে পোশাক শিল্পের অর্ডার আসা শুরু হবে, ব্রান্ড বায়ারদের অর্ডার সময়মতো সাপ্লাই না দিতে পারলে বায়াররা হয়তো অন্যদেশের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে, এমন একটা পরিস্থিতি রয়েছে। তবে সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামতকে উপেক্ষা করা হলে উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকদেরকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের অনেক সেক্টর আছে যেখানে দুর্যোগকালীন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। যেমন- চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী, খাদ্য উৎপাদন-বিপণন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী, সংবাদকর্মী। জাতীয় সঙ্কটে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়। ঘরে থাকা মানুষের জীবন নিরাপদ করতেই কিছু মানুষকে কাজ করতে হয়। সেই বিবেচনা থেকে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে গার্মেন্টস খুললে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা যদি বিবেচনা না করা হয়, তাহলে সেই ঝুঁকিটা হয় শ্রমিকের ব্যক্তিগত আর মুনাফা হয় মালিকের। এটা একটা চরম বৈষম্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকরা সবাই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অনেক মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যেহেতু শারীরিক দূরত্ব করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে এই মে যেহেতু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে, তাই করোনা ঝুঁকি বেড়ে যাবে। জীবনের ঝুঁকি জেনেও শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিচ্ছেন, কারণ জীবনের থেকেও তাদের কাছে জীবিকার চাপ বড় হয়ে পড়েছে। সুতরাং তাদের এই অর্থনৈতিক দুর্দশাকে কেউ যেন পুঁজি না করে। অন্যথায় শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকরা ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সমগ্র দেশবাসীই একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’

বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গার্মেন্টস শিল্প এলাকায় করোনা পরিস্থিতি আগে থেকেই ভালো না। গার্মেন্টসগুলোতে এখন নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত পরিষ্কার ও মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও তা ঠিকমত পালন করা হচ্ছে না। লকডাউনের ক্ষেত্রেও একই দৃশ্য দেখেছি। গার্মেন্টস যেদিন থেকে খোলা হয়েছে তার ১৪ থেকে ১৫ দিন পর আমরা এর ইফেক্টটা বুঝতে পারবো।’

অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকবান্ধব না। মালিকের মুনাফার দিকেই বেশি নজর। বর্তমান পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস খোলা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বেশ খারাপ। প্রধানমন্ত্রী যখন মালিকদের প্রণোদনা দিয়েছেন শ্রমিকদের বেতন ভাতার নিশ্চয়তার জন্য, সেখানে এমন তড়িঘড়ি করা উচিৎ হয়নি, আরও কিছুদিন দেখা উচিৎ ছিল। বিশেষ করে ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের এলাকার করোনা পরিস্থিতি যদি এতোটা খারাপ না হত, তাহলেও আমি এমন কথা বলতাম না। সারা বাংলাদেশের মধ্যে এসব অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি শোচনীয়।’

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা যখন বাড়ছে, বিশেষজ্ঞরা যখন মে মাসকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন, ঠিক সেই সময়ে পোশাক কারখানা খুলে দিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেওয়া হলো। এমনকি চরম ঝুঁকিতে থাকা নারায়ণগঞ্জেও ২৩২টি কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© Designed and developed by Mymensinghitpark