করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল লকডাউন করা হচ্ছে। মানুষ চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংক লেনদেনেও। যেসব এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে ওইসব এলাকায় ব্যাংক শাখাও বন্ধ করা হচ্ছে। এভাবে কোনো কোনো ব্যাংকের ৯০ ভাগ শাখা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক সেবাও সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। এতে গ্রাহক পড়ছেন বিপাকে। নিজেদের প্রয়োজনে এখন দূর-দূরান্তে ব্যাংক লেনদেনের জন্য যেতে হচ্ছে। তবে সরকারের সিদ্ধান্তে লকডাউনের মধ্যেও সরকারি ব্যাংকের শাখা বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা রাখা হবে। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে।
ব্যাংকাররা জানান, বেশির ভাগ ব্যাংক শাখায় এখন করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ ব্যাংকাররাও এখন অফিস করতে ভয় পাচ্ছেন। নানা ধরনের গ্রাহক ব্যাংকে ভিড় করছেন লেনদেনের জন্য। নিরাপদ দূরত্বে ব্যাংক লেনদেন করার নির্দেশনা থাকলেও বেশির ভাগ গ্রাহক তা মানেন না। ইতোমধ্যে কিছু কিছু ব্যাংকার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় এক ব্যাংক কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর পুরো শাখাই লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট শাখার ৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৃহস্পতিবার এক বিশেষ সতর্কতা বার্তায় বলা হয়েছে, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ব্যাংকারদের লেনদেন চালাতে হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এটি পরিপালনের জন্য প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে হবে। একই সাথে যেসব এলাকা করোনাভাইরাসের প্রভাবে লকডাউন করা হবে ওইসব এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক শাখা বন্ধ রাখতে হবে।
বিভিন্ন ব্যাংকে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রায় ব্যাংকের শাখাই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে লকডাউনের কারণে। এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও এমডি এবং ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গতকাল শনিবার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যেখানেই লকডাউন হচ্ছে সেখানেই ব্যাংক শাখা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত সারাদেশে তাদের ১১৮টি শাখার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২০টি শাখা খোলা আছে। বাকি ৯৮টি শাখাই বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে বেশির ভাগ গ্রাহকই টাকা জমা ও উত্তোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে তাদের এটিএম বুথগুলোতে পর্যন্ত টাকা সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেন করার জন্য অথরাইজ ডিলার (এডি) শাখাগুলো খোলা রাখা হয়েছে। এতে গ্রাহকের সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে তিনি মনে করেন।
ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের ৩৫৭টি শাখার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল ১৪২টি।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো: আব্দুল হালিম চৌধুরী জানান, শাখার খোলা অর্থ ব্যাংকারদের সাথে সাথে গ্রাহকও ঝুঁকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে কিছু দিনের জন্য হলেও ব্যাংক বন্ধ রাখাই ভালো। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নির্দেশনা অনুয়ায়ী যেখানেই লকডাউন সেখানেই শাখা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে তাদের পূর্বনির্দেশনা দেয়া আছে।
তবে লকডাউনের মধ্যেও আজ রোববার থেকে শাখা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বন্ধ শাখাগুলো খোলা রাখা হবে। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি মো: আতাউর রহমান প্রধান গতকাল জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা রয়েছে লকডাউনের মধ্যেও শাখা খোলা রাখতে হবে। এ কারণে আজ থেকে লকডাউনের কারণে ইতোমধ্যে যেসব শাখা বন্ধ করা হয়েছিল তা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে খোলা রাখা হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে শাখা ব্যবস্থাপকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম এ বিষয়ে গতকাল জানান, যেহেতু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল প্রণোদনা ভাতা সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়, এ কারণে সরকারি ব্যাংকের সকল শাখা আজ থেকে খোলা রাখা হবে। যেহেতু স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে তাই সরকারি ব্যাংকগুলোর শাখা খোলা রাখতে বাধা নেই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে লকডাউনের কারণে যেসব সরকারি ব্যাংক শাখা বন্ধ রাখা হয়েছিল তা আজ থেকে সীমিত পরিসরে হলেও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে লকডাউনের কারণে শাখা বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন গ্রাহক। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা উত্তোলন, বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, বেতনভাতা উত্তোলন, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল পরিশোধের চরম হয়ারানির শিকার হচ্ছে সাধারণ গ্রাহক। অনেকেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা উত্তোলন করতে না পেরে দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে। এ কারণে আজ থেকে সরকারি ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে অনেক।