২৪ ঘন্টার মধ্যে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের পূর্বের শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ
কাগজ প্রতিবেদক
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদার দাবিতে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় শিক্ষকদের লাঞ্ছনা ও অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বুধবার (৯ আগস্ট) রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন কলেজের নিরাপত্তা কমিটির আহ্বায়ক সবুজ আহমেদ। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ শিক্ষক-কর্মকর্তা জরুরি সভা করে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের পূর্বের শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টারে যে সকল শিক্ষার্থী ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে হল কর্তৃপক্ষ সীট বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বিধিমোতাবেক সীট বরাদ্দ দিবেন এবং রাত ১২টার মধ্যে কলেজের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাবেক ছাত্র প্রসেনজিত বড়ুয়া বর্তমানে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তৌহিদুল ইসলাম আশরাফী অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে গত মঙ্গলবার ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অনীহা প্রকাশ করলে তারা অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসাইনকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। একপর্যায়ে কক্ষের দরজা বন্ধ করে অধ্যক্ষে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। এসময় অফিস কক্ষে উপস্থিত শিক্ষক ‘ট্রিপল-ই’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম আনোয়ারুল হক ও রসায়নের সহকারী অধ্যাপক মো. খলিলুর রহমান ছাত্রলীগ নেতাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গেও অশালীন আচরণ করে। এমনকি চাঁদা না দিলে ভবিষ্যতে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। এরপর বুধবার ফের অধ্যক্ষকে টাকার জন্য ফোন করে গালামন্দ করে ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ। পরে বিকেল ৩টার দিকে অফিসে গিয়ে অধ্যক্ষকে না পেয়ে কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। এ বিষয়ে কলেজের নিরাপত্তা কমিটির আহ্বায়ক সবুজ আহমেদ বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, গত ৩১ জুলাই কলেজের অমর একুশে হল, মুক্তিযোদ্ধা হল ও মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি হল ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর হল কমিটিগুলোকে বরণ করতে অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য অধ্যক্ষের কাছে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে কলেজ ছাত্রলীগ। অধ্যক্ষ আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন জানালে ছাত্রলীগ সভাপতি তাদের হাতে টাকা দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে এবং একপর্যায়ে কক্ষ তালাবদ্ধ করে রাখে।
এব্যাপারে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক প্রসেনজিত বড়ুয়াকে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তৌহিদুল ইসলাম আশরাফী বলেন, ১৫ আগস্ট প্রোগ্রামের জন্য গেলে অধ্যক্ষ সহযোগিতা করেনি। অধ্যক্ষ সরকার বিরোধী একজন লোক। এসব নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তিনি বলেন, অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেয়া হয়নি।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, ১৫ আগস্ট নয়, নিজস্ব অনুষ্ঠানের জন্য দুজন সাবেক ছাত্র এসে লিখিতভাবে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দেয়ার এখতিয়ার নেই জানালে আমার সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি করে হুমকি দিয়ে তালা লাগিয়ে দেয় আমার কক্ষে। এরপর গভীর রাতে এসে তালা খুলে দিয়ে যায়। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার কলেজ শিক্ষক-কর্মকর্তা জরুরি সভা করে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের পূর্বের শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয় এবং আরো কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেওয়ার ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।