পাঁচ দিনের টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি অরো অবনতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি উপচে জেলা শহরের নতুন নতুন এলাকাসহ জেলার ছাতক দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা, ধর্মপাশাসহ সব উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ-লাখ মানুষ। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ায় সদরে দুর্ভোগ আর ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে দিন কাটাচ্ছেন শংকিত হাওরবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত শহরের ষোলঘর পয়েন্টস্থ সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা গতকালের চেয়ে ১২ সেন্টিমিটার কম হলেও শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় রাস্তায় যান চলাচল কম। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভা ও ছাতক পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি এখনো পানির নীচে রয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে জেলার সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা। এসব উপজেলার রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-ছাতক এবং ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে।
রোববার সুনামগঞ্জ পৌর শহরের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাটে পানি প্রবেশ করায় আবারো দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত শুক্রবার সকাল থেকে সুরমা নদীর পানি তীর উপচে শহরে ঢুকতে শুরু করে। আজ শহরের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। শহরের উকিলপাড়া, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, কালিপুর, ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, হাসননগর, বড়পাড়া, উত্তর আরপিনগর, হাজীপাড়া, মধ্যবাজার, নবীনগর, ধোপাখালী, নতুনপাড়া এলাকায় রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরে পানি দেখা গেছে। এদিকে জামালগঞ্জে ফেরারবাঁক, সদর, ভীমখালী, সাচনাবাজার, উত্তর ও ভীমখালী ইউনিয়নের প্রায় সব ক’টি গ্রামের মানুষ পানিবন্ধি হয়ে আছেন। পানি বাড়লে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করছেন হাওরবাসী।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদর সংলগ্ন গ্রামের মানুষ কিছুটা চলাচল করতে পাড়লেও হাওর এলাকার বাসিন্ধারা রয়েছেন চরম শংকায়। কারো ঘরে, উঠানে পানি থাকায় ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে বাড়ি টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জে ২৫ জুন প্রথম দফা বন্যা হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পাহাড়ী ঢলে আবার পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৬৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার ২৭৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০ হাজার ৩২০টি পরিবার। উপজেলাগুলোতে ত্রাণ হিসেবে ৫১০ টন চাল ও ৪৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন জেলায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে জিআর ৪০০ টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য বাবত ৩ লাখ, গোবাদি পগুল খাদ্য বাবত ২ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের হাতে পৌছে দেয়া হয়েছে।
রোববার দুপুরে পৌর শহরের কুরবান নগরসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৮ শতাধিক বন্যা কবলিত পরিবারে শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, সাবান ও রান্না করা খিছুড়ি তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো: আব্দুল আহাদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো: মিজানোর রহমান, সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রৌকশলী মো: সহিবুর রহমান, সদর উপজেলা সহকারী ভূমি আফিসার মো: আরিফ এহসান, কুরবান নগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: আবুল বরকত প্রমুখ। এদিকে জামালগঞ্জে ছাত্র জমিয়তের পক্ষ থেকে মো: আলতাফুর রহমান, হাফেজ মাওলানা মাহদী হাসন ও উজ্জ্বলসহ নেতৃবৃন্দরা হাওরের পানিবন্ধি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রৌকশলী মো: সহিবুর রহমান জানান, রোববার বিকেল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জে আরো পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং গতকাল বিকেল থেকে জেলা শহরের সরকারি কলেজে ও কুরবান নগর ইউনিয়নে ও বিভিন্ন উপজেলার অশ্রয় কেন্দ্রে বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদী প্রদান করা হচ্ছে।