চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে আসন্ন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ ২ হাজার ৮২৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও বিদ্যুতের বিভিন্ন প্রকল্পে। এরপরেই বাংলাদেশ বিমান দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। অর্থবিভাগের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির কাছে সরকারের ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ৮২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আর্থিক এবং অনার্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ ও কাউন্টার গ্যারান্টি দিয়ে থাকে সরকার। কোনো কারণে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ঋণ যথাসময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার দায় নিতে হয় সরকারকে।
চলতি অর্থবছর শেষে সবচেয়ে বেশি ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও এর বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য। সরকারের দেওয়া এ গ্যারান্টির পরিমাণ ৩৩ হাজার ৭৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ বিমান। এসময় বাংলাদেশ বিমানের বহরে বেশ কয়টি নতুন এয়ারক্রাফট যোগ হয়েছে। এ জন্য সংস্থাটিকে উড়োজাহাজ ক্রয় ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে এ পর্যন্ত ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, জ্বালানি তেল আমদানি, কৃষিঋণ বিতরণ, সার- কারখানা প্রকল্প ও সার আমদানি, বাংলাদেশ বিমানের জন্য বোয়িং ক্রয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থা দেশি-বিদেশি ব্যাংক থেকে এসব ঋণ নিয়েছে।
বাজেট দলিল অনুযায়ী, নতুন গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় বিদায়ী অর্থবছরে সার আমদানি, বোয়িং ক্রয়, কৃষিঋণ বিতরণ ইত্যাদি খাতে ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ বেড়েছে। অন্য দিকে ঋণ পরিশোধের কারণে গ্যারান্টি কমেছে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ ও বিবিধ খাতে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্প ও সার আমদানিতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআইসি) অনুকূলে ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৪৪৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। নতুন বোয়িং কেনার জন্য বাংলাদেশ বিমানের অনুকূলে গ্যারান্টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ৯৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা)। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিমানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে সোনালী ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।
কৃষিঋণ বিতরণে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে দেওয়া গ্যারান্টির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৮০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ১৪৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা)। অন্য দিকে জ্বালানি তেল আমদানি খাতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অনুকূলে গ্যারান্টির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৩৮১ কোটি ৭ লাখ টাকা)। বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি ব্যাংক ও কোম্পানির অনুকূলে গ্যারান্টির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৭৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ৩৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা)। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প খাতে গ্যারান্টির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৩১৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা)। এ ছাড়া বিবিধ খাতে গ্যারান্টির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৪০ কোটি ১৪ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ১১ হাজার ২৭১ কোটি ৬২ লাখ টাকা)।