হত্যা, ধর্ষণ ও অ্যাসিড মামলার আসামি ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জেলা খাটা এবং লঘু অপরাধে দণ্ডিতদের কীভাবে মুক্তি দেয়া যায়, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দীর্ঘদিনের বন্দী আসামীদের মুক্তি দিতে একটি প্রক্রিয়া ঠিক করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা-জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেখানে আক্রান্ত বেশি, সেখানে লকডাউন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নতুন করে কোনো নির্দেশনা আসেনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেডে) মাস্ক ও পিপিই বানায় এমন কারখানাগুলো খোলা থাকবে। বাকিগুলো বন্ধ থাকবে-এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে মন্ত্রিসভায়।
রমজানে অফিস সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা
এদিকে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ বা ২৫ এপ্রিল থেকে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান শুরু হবে। রোজার মাসে সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করেছে সরকার। রমজানে বেলা সোয়া একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জোহরের নামাজের বিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে যথারীতি শুক্র ও শনিবার। গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিসের এই সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে আরো বলা হয়, ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডাক, রেলওয়ে, হাসপাতাল ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে সময়সূচি নির্ধারণ ও অনুসরণ করবে। সুপ্রিম কোর্ট ও-এর আওতাধীন সব কোর্টের সময়সূচি সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করবে।
মাস্ক পরে দূরত্ব বজায় রেখে মন্ত্রিসভার অন্যরকম বৈঠক
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে টানা ২০ দিনের ছুটির মধ্যে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে গণভবনে সীমিত পরিসরে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি ছিল একেবারেই অন্যরকম। অন্য সময় দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের (মন্ত্রিসভা) এই বৈঠকে সব মন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও গতকালের বৈঠকে কেবলই যাদের এজেন্ডা ছিল তারাই উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, উপস্থিতি প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা প্রত্যেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসেছেন। তাদের সবার মুখেই মাস্ক ছিল। ভিডিও ফুটেজে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে দেখা গেছে।
এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসসহ কয়েকজন সচিবকেও মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন টেবিলে বসে থাকতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়া এবং এর সংখ্যা বাড়তে থাকায় সরকার জনসমাগম হয় এমন সব ধরনের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২২ ও ২৩ মার্চ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। পরে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের গণপরিবহনও। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ছুটি দুই দফায় বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২২ ও ৩০ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়নি।