দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে দেশের ব্যাংকগুলোয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ‘‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদন ২০১৯’ বলছে, প্রায় সব ব্যাংকই কম-বেশি এই শ্রেণির ঋণের ভারে জর্জরিত। গত কয়েক বছরে পাবলিক-ইভেট—উভয় খাতেই বেড়েছে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে এসব ঋণ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
‘ঋণ বিনিয়োগের প্রকৃতি’ বিশ্লেষণ ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাধারণত সরকারি খাতেই দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রবণতা বেশি। সরকারি খাতে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৭ শতাংশই দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। তবে, পিছিয়ে নেই বেসরকারিখাতও। আগে ব্যাংকগুলো থেকে বেসরকারি খাত স্বল্পমেয়াদি ঋণই বেশি পেতো। এখন স্বল্পমেয়াদি কমছে, বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নানা ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। সাধারণত এই ঋণ বড় অঙ্কের হয়। একসঙ্গে অনেক টাকা একজনের হাতে চলে যায়। আবার পরিশোধে গ্রেস পিরিয়ড সুবিধাসহ ঋণের কিস্তির হার কম হওয়ায় ব্যাংকে তারল্য সংকট তৈরি করে। এক্ষেত্রে সরকার নিলে তা বেসরকারি খাত সম্প্রসারণে বাধাগ্রস্ত হয়। আবার বেসরকারি খাতে এই ধরনের ঋণ গ্রহণকারীর উল্লেখযোগ্য অংশ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ফলে, অন্য উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে কড়াকড়ির মুখে পড়তে হয়।
জানতে চাইলে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকারি খাতের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে ঝুঁকি বেশি। এরপরও ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বাড়াতে ব্যাংক থেকে এই ধরনের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক ব্যবস্থাই মূল ভূমিকা পালন করে। সেজন্য ঝুঁকি থাকার পরও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’
‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদন-২০১৯’ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পাবলিক সেক্টরে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ২০১৬ সালে যেখানে ছিল ৯৪.৮ শতাংশ, তা ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫.১ শতাংশে। যা ২০১৮ সালে আরও বেড়ে ৯৫.৯ শতাংশে দাঁড়ায়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এই ঋণের স্ফীতি ঘটে ৯৬.৮ শতাংশে।
বিপরীতে পাবলিক সেক্টরে স্বল্পমেয়াদি ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রতিবছরই কমেছে। অর্থাৎ এখাতে ২০১৬ সালে স্বল্পমেয়াদি ঋণপ্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে ২০১৯ সালে ৩.২ শতাংশে এসে থেমেছে।
এদিকে, গত কয়েক বছরে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে প্রাইভেট সেক্টরেও। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে এই শ্রেণির ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণের ৩৩.৪ শতাংশ। যা ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১.৮ শতাংশে। তবে করোনার কারণে ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় ২০১৯ সালে প্রাইভেট সেক্টরে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমে ৩৭.৪ শতাংশে নেমে আসে। বিপরীতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ধারাবাহিকভাবে কমছে।