কাগজ প্রতিবেদক
নগরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ নগরীর আমলাপাড়া এলাকার ঐতিহ্যের শেরপুকুর দখলমুক্ত করে পূণ:খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে সরকারের খাস জমিতে অবস্থিত এক সময়ের স্মৃতিচিহ্ণের এই পুকুরটি মাছ চাষের জন্য লীজ দেয়া হলে সেটিতে অবৈধভাবে মাঠি ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মানের পায়তারা করছিলো একটি মহল। এরই প্রেক্ষিতে বর্তমান জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী গত ৩ জুলাই পুকুরটির মালিকানা স্পষ্ট করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এরপর সোমবার দুপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত ভরাটকৃত মাটি কেটে পুকুরটি পূণ:খননের প্রতি সমর্থন জানান। পুকুরটি পূণ:খননের মহতি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে নগরবাসী। লীজের নামে দখল হয়ে যাওয়া ২৫ শতক জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এসময় জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ, ব্যবসায়ী রেজাউল করিমসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, আমলাপাড়া এলাকার এ পুকুরটি ১৯৮৪ সালে মাছ চাষের জন্য প্রথম লীজ দেয়া হয় একটি পক্ষকে। এরপর সেখানে আর মাছ চাষ করা হয়নি। দিনে দিনে পুকুরটি ভরাট হতে থাকে। নিয়ম ভঙ্গ করায় একপর্যায়ে লীজ বাতিলকরে প্রশাসন। ২০১২ সালে পুকুরটি দেয়া হয় রেজাউল করিম নামে এক ব্যবসায়ীকে। এরপর তিনিও পুকুর খনণ না করে ভরাট করতে থাকেন। জমিটির শ্রেণি পরিবর্তন করে বেদখলের চেষ্টাও করে একটি মহল। এনিয়ে নগরবাসী তথা নাগরিক সমাজ ফুঁসে উঠে। পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে একাধিক সংগঠন দীর্ঘদিন আন্দোলনও করে।
সব কিছু মিলিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই আশংকা করা হচ্ছিল, প্রশাসনের পুকুরের জমিটি বেহাত হতে পারে। জেলা প্রশাসক আসেন, আবার ফিরে যান। কাজের কাজ হয়নি এতোদিন। এমনই অবস্থায় বর্তমান জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী গত ৩ জুলাই পুকুরটির মালিকানা স্পষ্ট করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। তখন নাগরিক সমাজ থেকে দাবী উঠে ভরাট হয়ে যাওয়া পুকুরটি পূণ:খননের। প্রশাসন জনদাবীর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অবশেষে এখানে পুকুর খননেরই উদ্যোগ নেন।
পুকুর খননের কাজ শুরু করে মোহিত উর রহমান শান্ত এমপি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে সকল হিন্দু দেশ ছেড়ে চলে যায়, তাদের সম্পত্তি ও অর্পিত সম্পত্তি বিভিন্ন সময়ে ভূমিদস্যুরা সিন্ডিকেট করে দখলে নেয়। আমরা যারা সরকারের প্রতিনিধি রয়েছি, তারা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে সেইসকল সম্পত্তি উদ্ধারে কাজ করে যাবো। তিনি বলেন, একসময় ময়মনসিংহ নগরীতে পুকুরে সয়লাভ ছিলো। এখন অনেকগুলোর স্মৃতিচিহ্ণটুকু নেই। এব্যাপারে প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
লীজ গ্রহীতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, নার্সারি করার জন্য আমাকে জায়গাটি লিজ দেওয়া হয়েছিলো ২০১২ সালে। পরবর্তীতে জমিটি দখলে নিতে মামলা হলে জেলা প্রশাসনও পালটা মামলা করে। ওই অবস্থায় আমি রিট করে আটকে দেই। আমি সরকারের পক্ষেই কাজ করেছি। ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর লিজমানি দিলেও মামলা থাকায় প্রশাসন তা গ্রহণ করেনি। আমি জমিটি দখলে রাখিনি বরং কেউ যাতে দখল করতে না পারে সে চেষ্টাই করেছি।
ময়মনসিংহ জন উদ্যোগের আহবায়ক এডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, এখানে আবার পুকুর হওয়ার খবরটি আনন্দের এবং উৎসাহ জনক। তিনি বলেন নগরীর অন্যান্য বেদখল হওয়া পুকুর গুলোও প্রশাসন নিজেদের দখলে নিতে উদ্যোগ নিবে বলে তিনি আশা করেন। ##