ইদানিং কিছু ওয়েব সিরিজে উদ্ভট গল্প, অশালীন দৃশ্য, নোংরা সংলাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়েকটি ওয়েব সিরিজ নিয়ে নগ্নতার জোর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক চলছে।
শিল্পীদের এমন অশালীন কাণ্ডে বিব্রত এবং বিস্মিত দর্শক। বাংলা সংস্কৃতিতে নগ্নতা নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড।
‘নগ্ন-কামচিত্র আমার সংস্কৃতির অংশ নয়’ শিরোনামে একটি লেখা সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড তার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
এতে তিনি লিখেন—যারা বলে উন্মুক্ত আকাশের যুগে নগ্নতা বা কামচিত্র ধারণ এবং প্রদর্শন কোনো বিষয় নয়। তাদেরকে বলব অবশ্যই এটি একটি বিষয় এবং গুরুতর অপরাধমূলক বিষয়। কেননা, কোন দেশে, কোন সমাজ ব্যবস্থায় কতটুকু যৌনদৃশ্য ধরাণ করে তা সর্বশ্রেণীর জন্য প্রদর্শন করা যায় তা, একজন নির্মাতা এবং ওই দৃশ্যে অভিনয়শিল্পীকে অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।
নিজেদের জন্য বাংস্কৃতি হুমকির মুখে। এমনটা জানিয়ে ডায়মন্ড লিখেন—বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যৌনতা বিভৎসতা ইত্যাদি ধারণ এবং অবাধ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সম্প্রচার নীতিমালায় তা ভালোভাবেই উল্লেখিত রয়েছে। পরিধেয় কাপড়ে আবৃত শরীরের কোনো অংশ প্রদর্শন না করেই নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে ইরানি চলচ্চিত্র আজ বিশ্বনন্দিত। এই ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সংস্কৃতি যথাযথভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন মাত্রা অনুকরণ বা অনুসরণ করতে গিয়েই আমাদের বাংলা সংস্কৃতিকে আমরাই গভীর খাদের কিনারে দাঁড় করিয়েছি।
পুরোনো চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ টেনে এই পরিচালক লিখেন—একটি দেশের সংস্কৃতি এবং সে দেশের সমাজ ব্যবস্থা কখনোই একজন নির্মাতা বা ক’জন অভিনয়শিল্পীর দৃষ্টিতে সীমাবদ্ধ নয়। তাদের ক’জোড়া চোখই কোটি মানুষের চোখ নয়। উন্মুক্ত নারীদেহ আর অর্থ আয়ে আশক্ত হয়ে সমাজের গুটি কয়েক মানুষ একসময় নানা যুক্তি উপস্থাপন করে দর্শক চাহিদার কথা বলে দর্শকের কাঁধে দোষের জোয়াল চাপিয়ে- রাজার সন্ন্যাসী, কাঁচের দেয়াল, সীমানা পেরিয়ে, নবাব সিরাজউদ্দৌলার মতো নির্মিত চলচ্চিত্রের দেশকে বানিয়ে ছিল অশ্লীল চলচ্চিত্রের স্বর্গরাজ্য।
এর আগে চলচ্চিত্র থেকে অশ্ললতা দূর করতে র্যাব যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল তার প্রশংসা করেন ডায়মন্ড। তিনি লিখেন—এ জাতি নিশ্চয় ভুলে যায়নি বাংলা চলচ্চিত্র যখন অশ্লীলতার রাহুগ্রাসে নিমর্জ্জিত তখন এই শিল্পকে রক্ষা করতে সুস্থ চলচ্চিত্র প্রেমিক কিছু চলচ্চিত্রের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে কর্নেল গুলজার (মরহুম) তার বাহিনীসহ অত্যন্ত কঠোর হাতে দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন অশ্লীল চলচ্চিত্র পাড়াকে। কিন্তু ততদিনে চলচ্চিত্রের যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের কাছে তখন থেকেই বাংলা সিনেমা এবং সিনেমা হল উচ্ছিষ্ট শুধু নয়, অশ্লীল আতঙ্কের অমর্যাদায় অধিষ্ঠিতও বটে।
চলচ্চিত্রে অশ্লীলতাকে এক সময় ছাড় দেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন ডায়মন্ড। আর সেটাই ছিল বড় ভুল। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি লিখেন—সেইদিন, প্রথম প্রহরে হাতে গুনা ক’টা মানুষকে ছাড় দেয়াই ছিল বাঙালি জাতির অনেক বড় ভুল। সেই ভুলের মাশুল আমাদেরকে দিতে হচ্ছে। ওই যে চলচ্চিত্র ধ্বংস হলো, হাজার চেষ্টা করেও তা পুনরুদ্ধার আজও সম্ভব হলো না। এখন সেই একই রকম একই ভাইরাসে আক্রান্ত বিভিন্ন সম্প্রচার মাধ্যম। এ আর বাড়তে দেয়া যায় না। দেখেও না দেখার ভান করা মানে আত্মপ্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। প্রবাদ আছে শহরে আগুন লাগলে দেবালয় রক্ষা পায় না। আমার ঘর আমার প্রজন্মকে রক্ষার দায় আমার। আধুনিকতার নামে অশ্লীলতার পথকে প্রশস্ত করা কাম্য হতে পারে না। আমাদের সঞ্চিত পেছনের নির্মম অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষায় এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে আগের মতো গুটি কয়েক মানুষের কালো থাবায় অশ্লীলতার দায়ে আমরা হারাবো আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যে ভরা সংস্কৃতির গর্বিত নাটকের ইতিহাস।
সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড এখন করোনা নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই মধ্যে সিনেমাটির অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।