কারখানা লে-অফ করতে গিয়ে নতুন জটিলতায় পড়েছেন তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। আইনগত জটিলতার কারণে করোনার সময়টায় কোনো কারখানা লে-অফ ঘোষণা করতে পারছেন না তারা। কিন্তু ইতোমধ্যে যেসব শিল্পমালিক নিজ নিজ কারখানা লে-অফ ঘোষণা করেছেন সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, লে-অফকৃত কারখানার মালিকরা সরকারঘোষিত প্রণোদনা তহবিল থেকে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে ঋণ নিতে পারবেন না।
দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী করোনার কারণে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে কোনো কারখানা লে-অফ ঘোষণা করার সুযোগ নেই জানিয়ে বিশ্লেষকরা জানান, শ্রম আইনে লে-অফ হলো কোনো কারখানায় কাঁচামালের স্বল্পতা, মাল জমে যাওয়া কিংবা যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় শ্রমিককে কাজ দিতে না পারার অক্ষমতা প্রকাশ করা। আর বর্তমানে কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে সরকারি ঘোষণায়, মালামাল স্বল্পতায় নয়। আইন অনুযায়ী, লে-অফ চলাকালে প্রথম ৪৫ দিনের ক্ষেত্রে পূর্ণকালীন শ্রমিকের মোট মূল মজুরি এবং মহার্ঘ ভাতার অর্ধেক দিতে হয়। পরের ১৫ দিনের জন্য শ্রমিক পাবে ২৫ শতাংশ মূল বেতন এবং বাড়ি ভাড়া।
জানা যায়, পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রথমাবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৮০ শতাংশ রফতানিমুখী কারখানা হওয়া, এই টাকা থেকে কেবল শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা এবং টাকা তিন মাস যথাসময়ে মজুরি পরিশোধ করার শর্ত দেয়া হলেও নতুন করে আরেকটি শর্ত আরোপ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর আগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শকের বরাবরে পাঠানো এক আবেদনপত্রে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তাদের ক্রয়াদেশ বাতিলসহ চলমান অর্ডারের উৎপাদন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া ক্রেতারা উৎপাদিত পণ্য শিপমেন্ট না করা এবং মজুদকৃত ফেব্রিক্স না কাটার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার কারণে মার্চের চতুর্থ সপ্তাহে যখন কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়, তখন কারখানা মালিকদের ধারণা ছিল স্বল্প সময়ের মধ্যে কারখানা খুলে দেয়া যাবে। তাই মালিকরা কেউ শ্রম আইনের কোনো ধারা উল্লেখ না করে বন্ধ ঘোষণা করেন। আবার কেউ আইনের ১২ এবং ১৬ ধারার বিধান উল্লেখ করে বন্ধ ঘোষণা দেন। যদিও এ ধরনের পরিস্থিতিতে ১২ এবং ১৬ ধারার বিধান ছাড়া বন্ধের কোনো উপায় নেই।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ইতোমধ্যে অধিকাংশ কারখানা মার্চ মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে। এপ্রিল মাসের মজুরি হিসাবকালে সরকার ঘোষিত পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের আবেদন করতে গিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যেসব কারখানা কোনো ধারা উল্লেখ না করে এবং যেসব কারখানা আইনের ১২ এবং ১৬ ধারার বিধান উল্লেখ করে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, সেসব কারখানাকে লে-অফ হিসেবে গণ্য করে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান তিনি।