মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী গত কয়েকবছর ধরে উৎপাদন, গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানো এবং বিতরণ ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে আসছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার, স্বয়ংক্রিয় বিকল্প লাইন থেকে সরবরাহ নিশ্চিতসহ নতুন পরিকল্পনা সংযোজন করে আগামী এক বছর এ কর্মপরিকল্পনাকে সামনে রেখেই কাজ করতে যাচ্ছে বিভাগটি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎখাতে ২০৪১ সাল মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বছরভিত্তিক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতির প্রভাব কিংবা উৎপাদিত বিদ্যুতের সঙ্গে চাহিদার যে পার্থক্য রয়েছে, এগুলো আমাদের মূল পরিকল্পনায় খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে আশা করছি। কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বা হবে, তবে আমাদের মূল ফোকাস যে বিষয়গুলোর ওপর সেই ধারাই অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের হাতে ৯৩টি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
এদিকে, প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ২৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। জ্বালানি মিলে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।
জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ উপজেলায় বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। এজন্য বিতরণ ব্যবস্থার ওপর এবারও জোর থাকবে বিদ্যুৎ বিভাগের।
তথ্য মতে, এরমধ্যে ২৫৭ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। আরও ১৫৩ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে। বিদ্যুত সঞ্চালনে একটি লাইন বিকলের আবর্তে পড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সঙ্কট পূরণের লক্ষে হাতে নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হওয়া অন্য একটি সম্পূরক লাইনের ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। অর্থ্যাৎ কোনো কারণে বিদ্যুত লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তা পুনরায় স্বাভাবিক হতে বহু সময় ব্যয় করতে হবে না। নতুন এ প্রকল্পের আওতায় তেমন ঘাটতি অতি সহজেই মেটানো যাবে।
এদিকে, বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও নিজস্ব অর্থায়ন, বিভিন্ন তহবিল এবং ইসিএ ফাইনান্সিং মিলিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানিখাতে ৩০ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরমধ্যে বিদ্যুৎখাতে অর্থ বিভাগ দেবে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৯৩ লাখ, ইসিএ (ঠিকাদারদের মাধ্যমে অর্থায়ন) হবে এক হাজার ৮৩৭ কোটি ৯৬ লাখ এবং নিজস্ব তহবিল থেকে আরও ৯৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ খাতে মেগা প্রকল্পগুলোকে এবারের বাজেটেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সর্বাধিক। রামপাল, পায়রা, মাতারবাড়ি এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অবকাঠামোকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়ে এসব সম্ভাবনাময় প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পায়রা ১৩২০, মাতারবাড়ি ১২০০ এবং রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উল্ল্যেখযোগ্য। বর্তমানে দেশে মাথাপিঁছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫১০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এখন ১৬ হাজার ৮৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ৪৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ১২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রর চুক্তি সই করা হচ্ছে। যার ক্ষমতা দুই হাজার ৭৮৫ মেগাওয়াট। এছাড়া আরও ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রর দরপত্র প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া আরও ১৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দিতে যাচ্ছে সরকার।
বিদ্যুৎ সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, ভবিষ্যত বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হবে বিদ্যুত উৎপাদনের সব থেকে বড় মাধ্যম। এখন অনেক দেশই কয়লা, পরমাণু এবং গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা করছে। দেশগুলো বিদ্যুতের জন্য এককভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। সেখানে অনেকটা পিছিয়েই রয়েছে বাংলাদেশ। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ১০ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষে এবার নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি পায়রাতে দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এরমধ্যে উৎপাদনে এসেছে। এ কোম্পানিটিই বিসিপিসিএল রিনিউয়েবল নামে নতুন কোম্পানি গঠন করে দেশে ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুত উৎপাদন করবে।