করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বজুড়ে লকডাউন এবং অচলাবস্থার কারণে বহুমাত্রিক সংকট দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতে। এই সময়ে নতুন করে জনশক্তি রপ্তানি সম্ভব হয়নি বরং মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির কার্যক্রম জোরদার করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে এখন থেকেই কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রবাসী কর্মসংস্থানের ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে। করোনা আমাদের জাতীয় অর্থনীতি এবং উৎপাদনশীল খাতে এরই মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের জাতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। ফলে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সরকার সবসময় বিবেচনা করে।
তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকেই দেশে ফিরে এসেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই বৈধ শ্রমিকদের আবার ওসব দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এখন থেকেই আলোচনা শুরু করেছি।
ইমরান আহমেদ বলেন, করোনা পরবর্তী আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের পরিবর্তিত চাহিদা অনুযায়ী ফেরত আসা কর্মীদের পুনরায় প্রেরণের ব্যাপারে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি।
জানা গেছে, করোনা পরবর্তী জনশক্তি রপ্তানি জোরদারের লক্ষ্যে দুটি বিষয়ে কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য সমন্বিত ফরমেটে একটি ডাটাবেজ করার কথা ভাবা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বয়ে প্রবাসী কর্মীদের জন্য ‘এক্সক্লুসিভ কোভিড টেস্টিং সেন্টার’ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যাতে করোনা সংক্রান্ত ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে গিয়ে কেউ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে না পারে।
অতীতে যতবার সরকার জনশক্তি রপ্তানির ব্যাপারে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিত মানবপাচার বা দালালদের দৌরাত্ম্য। বরাবরের মতো এবারও মানবপাচার ঠেকানোকে সরকার জিরো টলারেন্স হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পক্ষের সাথেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া প্রবাসী কর্মীদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে ।
এদিকে করোনা পরবর্তী জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে ভবিষ্যতে কর্মী প্রেরণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের টিটিসিগুলোর কার্যক্রমে গতি আনার জন্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ-সংস্থার ৫০ জন কর্মকর্তাকে ২৫টি দলে বিভক্ত করে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা বিশেষত অনগ্রসর জেলাগুলো থেকে অধিকসংখ্যক দক্ষ কর্মী তৈরি করে বিদেশে প্রেরণ, প্রশাসনিক ও চলমান কার্যক্রমে গতিশীলতা আনা এবং টেকসই ও সৃজনশীল পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) আওতাধীন ডিইএমও, আইএমটি ও টিটিসিগুলোর সরকারি কর্মযজ্ঞ এবং প্রশিক্ষণের গুণগতমান উন্নয়ন ও উৎকর্ষতা বৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মেয়াদ অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি ও উদ্ভুত সমস্যা সমাধান ও সমন্বয়ের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিএমইটির নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের জেলা অনুযায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ৯ জুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করা হয়।
আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলো পরিদর্শন করে প্রশিক্ষণ শাখায় সুনির্দিষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। পাশাপাশি পরবর্তীতের পরিদর্শনসহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নসহ ফলোআপ করতে বলা হয়েছে।