চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় মাস্ক এবং সুরক্ষা উপকরণ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন ডা. আবু তাহের। সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও বক্তব্যের সমালোচনায় তোলায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগে কর্মরত মেডিকেল অফিসার আবু তাহের ১৬ এপ্রিল তার ফেসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তার বিভাগের চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় মাস্ক এবং সুরক্ষা উপকরণ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
মাস্ক ও সুরক্ষা উপকরণ মজুদ রাখা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ঐ স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে শনিবার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়কের দপ্তর থেকে আবু তাহেরের নামে কারণ দর্শানোর একটি নোটিশ জারি করা হয়।
চিকিৎসক আবু তাহের স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগকে ‘শিষ্টাচার বর্জিত শব্দ প্রয়োগ’ করে অভিযুক্ত করার ‘অপচেষ্টা’ চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয় নোটিশে।
আবু তাহেরের ঐ স্ট্যাটাস ‘সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বা কোনো শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে বা অন্যকে প্ররোচিত করতে’ পারে অভিযোগ তুলে তার নামে জারি করা হয় ঐ নোটিশ।
কী বলছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক?
চিকিৎসক আবু তাহের তার স্ট্যাটাসে লেখেন: “এখন পর্যন্ত আমি সহ আমার ডিপার্টমেন্ট এর কেউ ১টিও n95/kn95/ffp2 মাস্ক পাইনি। তাহলে স্বাস্থ্য সচিব মিথ্যাচার কেন করলেন উনি n95 ইকোয়িভেলেন্ট মাস্ক দিচ্ছেন? এই মিথ্যাচার এর শাস্তি কি হবে?”
এছাড়া তার বিভাগে ৮ জন চিকিৎসকের জন্য ২টি পিপিই দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন।
বিবিসিকে তিনি বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দরকার, যেহেতু আমাদের রোগীর মুখের সবচেয়ে কাছে থেকে কাজ করতে হয়। কিন্তু আমাদের বিভাগে এসব সুরক্ষা উপকরণ দেয়া হচ্ছে না।”
তিনি মনে করেন সুরক্ষা উপকরণ না থাকায় চিকিৎসকরা যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন, তেমনি অসুরক্ষিত অবস্থায় বহু রোগীকে চিকিৎসা দেয়া চিকিৎসকরাও অন্য রোগীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।
আবু তাহের বলেন, “আমাদের মত দেশে সরকার সব চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীকে সব ধরনের সুরক্ষা উপকরণ দিতে পারবে না, এটা স্বাভাবিক। সেই বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমরা চিকিৎসা দেই। কিন্তু তাহলে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মিথ্যাচার করছে যে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ মজুদ আছে?”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশটিতে আবু তাহেরের অভিযোগকে মিথ্যাচার হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং বলা হয় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড, ফ্লু কর্ণার, জরুরি বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ ও শিশু বিভাগসহ সব বিভাগে কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই সহ যাবতীয় সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
তবে ঐ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা একজন চিকিৎসক জানান প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী নতুন পিপিই পেলেও যথাযথ মাস্কের অভাবে তারা অনিরাপদ অবস্থাতেই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।
ঐ চিকিৎসক বলেন, “আমাদের বিভাগে যথেষ্ট পিপিই থাকলেও আমরা সাধারণ মানের একটি মাস্ক ব্যবহার করি, যা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়।”
কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা সম্পর্কে কথা বলতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ফরিদউদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্তর দেননি। বিবিসি।