বাসস :
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানে পাহাড় ধসে, স্রোতে ভেসে পাঁচজনের মৃত্যু এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন। বৃষ্টি কমে আসলে এখন নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি, ঘরে ফিরছে লোকজন। তবে এখনো সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে, বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সেবা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ।
বাসসের বান্দরবান সংবাদদাতা সৈকত দাশ ও রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা মনসুর আহম্মেদ জানান-বিগত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বন্যার পানিতে বান্দরবান শহরসহ সাত উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতিসহ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জেলা ঘুরে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সদর উপজেলা কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চীফ জুডিশিয়াল কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিসসহ মেম্বার পাড়া, আর্মি পাড়া, হাফেজ ঘোনা, ইসলামপুর, কালাঘাটা, বালাঘাটাসহ শহরের প্রায় ৮০শতাংশ বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।
বন্যার পানি সড়কের ওপরে ওঠায় গত রোববার সকাল থেকে বুধবার পর্যন্ত বান্দরবান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজারে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি।
এছাড়া জেলা শহর থেকে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় রোববার রাত থেকে ইন্টারনেট সেবা প্রায বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বান্দরবানের সার্বিক দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে একটি লিখিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে- টানা বৃষ্টির কারণে শহরে বেশীর ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাহাড় ধসে প্রায় ৪৫০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ৯ হাজার ৫০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড় ধসে পৃথক ঘটনায় জেলা সদরে সন্ধ্যা রাণী শিল (৪০) ও বুলু শিল (২২) নামে দুইজন নিহত হয়েছেন। ছায়ারাণী তঞ্চঙ্গ্যা (৩৭) নামে একজন নারী নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যদিকে, পাহাড় ধসে নাইক্ষ্যংছড়িতে ফংসা মারমা (৬০) ও মেনপয় ম্রো (৩০) নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুইজন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়ন থেকে মো. মুছা (২২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
জেলার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র প্লাবিত হওয়ায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাড়া বাকি ছয়টি উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে।
বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণে পৌর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি প্লাবিত হওয়ায় সব মেশিন প্রায় অকেজো হযে গেছে, তবে অকেজো মেশিনগুলো মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বান্দরবান পৌরসভার মেয়র বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) জানান, এবারের টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানে যে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হযেছে তা অকল্পনীয়। শহরের বেশীরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে বর্তমানে পানি একটু নামতে শুরু করলে শহরে কাদা ও ময়লা জমে গেছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পৌরসভা কাজ করছে এবং জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে দূর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে জানান , ‘বান্দরবানে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও সারাদেশের সাথে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তিনি বাসসকে জানান, জেলায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রসস্ত হয়েছে লামা ও সদর উপজেলা।
জেলা প্রশাসক বাসসকে জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যে প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিসের সাথে সমন্বয় করে দূর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করা হচ্ছে।
দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় মোট ২০৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ৮৫ টন এবং ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং দূর্যোগ মোকাবেলায় আরও ত্রাণ বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল রেসপন্স টিম এবং প্রত্যেক উপজেলায় কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।