করোনায় অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে কম ঝুঁকি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শ্রমিক, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগের সুবিধা বিবেচনা করেই এসব প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের চিন্তা করছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পথ সহজ করতে বেশি কিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
করোনার ভেতরও বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যাংকিং খাতে জটিলতা কমানোর পাশাপাশি বিদ্যমান আইন সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম-সচিব মু. শুকুর আলী গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন।
‘কোভিড-১৯: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিকরণ’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়েছে ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ-নিজ দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অন্যতম শর্ত। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেন সহজে লভ্যাংশ নিজেদের ইচ্ছেমতো জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থারই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়মনীতি সহজ করে তার বাস্তব প্রয়োগ দরকার।
এরআগে গত ৮ জুন অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেন বিনিয়োগের অর্থ ও লভ্যাংশ নির্বিঘ্নে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, দেশে বিদ্যমান ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭’-কে বাংলায় রূপান্তর ও যুগোপযোগী করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অভিমত নেওয়া হবে। তারা ২১ দিনের মধ্যে অভিমত দেবেন। তাদের অভিমতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবতর্ন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এমএ মোমেন বলেন, ‘বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী বিভিন্ন কারণে তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সরানোর চিন্তা করছেন। তারা যেন বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হন, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের মিশন থেকে যোগাযোগ শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিশনগুলোকে অর্থনৈতিক কূটনৈতিক কৌশলের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে কী কী সুযোগ-সুবিধা সরকার দিচ্ছে, তাও তুলে ধরা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের বাংলাদেশে সফর করারও আহ্বান জানানো হচ্ছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে যে সব নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলো অনুসরণ করে কাজ চলছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এরই মধ্যে ১০০ অর্থনৈতিক জোন সৃষ্টি করা হয়েছেল।’ এখানে বিনিয়োগ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা. বিডাসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা কাজ করছে বলেও তিনি জানান।