সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কুমিল্লায় নানা-নাতনির বিয়ের রহস্যের জট খুলেছে। বিয়ে পাগল সেই রিকশাচালক (নানা) শামসুল হক শামুকে (৬০) অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরের দিকে তাকে কুমিল্লার আদালতে সোপর্দ করার পর আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এছাড়াও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য (শামুর নতুন স্ত্রী) ভিকটিম ওই স্কুল ছাত্রীকে (নাতনি) পাঠানো হয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এদিকে অন্য কাজীর বালাম বই ও সিল ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জেলার লাকসামের সারোয়ার হোসেন নামের এক কাজীকে। শুক্রবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব।
ওসি জানান, রিকশাচালক শামসুল হক শামু ৮ম শ্রেণির ওই ছাত্রী পুতুলকে (ছদ্ম নাম) বিয়ে করার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলায় তিনি শামুর বিরুদ্ধে তার মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করার অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে কথিত নব দম্পতিকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাতেই শামুর বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়াও ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা এবং তার বয়স নির্ধারণে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রতারণার মাধ্যমে অন্য নগরীর এক কাজীর বালাম বই ও সিল ব্যবহার করে বিয়ে সম্পন্ন করার অভিযোগে সারোয়ার নামের এক কাজীকেও আটক করেছে পুলিশ।
কুমিল্লা মহানগরীর ৭নং ওয়ার্ডের (ঠাকুরপাড়া এলাকা) নিকাহ রেজিষ্ট্রার কাজী মজিবুর রহমান সরকার জানান, লাকসামের আজগরা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কাজী দাবিদার সারোয়ার হোসেন প্রতারণার মাধ্যমে আমার বালাম বই-৫৪ ও পৃষ্টা ২৮ উল্লেখ করে ওই বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছিল। যা ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া ও জালিয়াতি।
তিনি আরো বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার কোতয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করি। শুক্রবার সকালে খবর পেয়ে কাজী গোলাম সারোয়ার আমার বাসায় এসে টাকার মাধ্যমে বিষয়টি আপস-মীমাংসা করতে চায়। কিন্তু আমি কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশকে বাসায় খবর দিয়ে এনে তাকে পুলিশে সোপর্দ করি।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল হক বলেন, কাজী মুজিবুর রহমানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতারক কাজী সারোয়ারকে ঠাকুরপাড়া থেকে আটক করে লালমাই পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানেই তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতারক কাজী গোলাম সারোয়ার লাকসাম উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মৃত আবুল কাসেমের ছেলে।
এ বিষয়ে লালমাই থানার ওসি আইয়ুব জানান, গোলাম সারোয়ারকে কুমিল্লা থেকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি লাকসামের একটি এলাকার কাজী বলে দাবি করেছেন, এ বিষয়েও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১০ মে জেলার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের পেরুল গ্রামের শামছুল হক শামু একই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার ইমাম হোসেনের মেয়েকে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা উসুল দিয়ে বিয়ে করেন। ওই মেয়ে স্থানীয় পেরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে যাওয়া-আসার সময় তিনি শামুর রিকশায় যাতায়াত করতেন। শামসুর ছোট এক মেয়ে নতুন স্ত্রীর সাথে একই ক্লাসে পড়ে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শামু সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, সকল আইনগত দিক দেখেই সে দূর সম্পর্কের তার নাতনিকে বিয়ে করেন। সে ৮ম শ্রেণিতে পড়লেও বয়স ২০ বছর ৩ মাস। এর প্রমাণ তার কাছে আছে।
মামলার বাদি মেয়ের মা তাছলিমা আক্তার জানান, শামু একজন প্রতারক, তার সংসারে স্ত্রী ও ৬ ছেলে মেয়ে থাকার পরও আমাদের বাড়িতে কাজ করার সুযোগে মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে ভুয়া কাজির মাধ্যমে বিয়ে করেছে। তিনি শামুর শাস্তি দাবি করেন।