করোনাভাইরাস লক-ডাউনের ভেতর তাবলিগ জামাত নামে মুসলিম একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর দিকে পুরো ভারতের এখন নজর।
গত মাসে দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক একটি সম্মেলনে (মারকাজ) যোগ দেয়া বেশ কজন করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ার ভারতজুড়ে প্রচণ্ড উদ্বেগ, ক্রোধের প্রকাশ ঘটছে।
বিশেষ করে, হিন্দুত্বাবাদী বিভিন্ন রাজনীতিক ছাড়াও ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ মানুষ ভারতে করেনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য তাবলিগ জামাতকে দায়ী করছেন।
মারকাজে অংশ নেয়া লোকজনের খোঁজে বিভিন্ন রাজ্যে তাবলিগিদের মসজিদে মসজিদে, বাড়িতে-বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে দিল্লির পাশে একটি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তুলকালাম।
উত্তর প্রদেশ রাজ্যের গাজিয়াবাদ জেলায় যে ১৫৬ জন তাবলিগ সদস্যকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে, তাদের বেশ কজন রয়েছেন সেখানকার এমএমজি নামে একটি হাসপাতালে।
তাদের কজনের বিরুদ্ধে আজ স্থানীয় পুলিশ কোয়ারেন্টিনের নিয়মকানুন অবজ্ঞা করা এবং হাসপাতালের নারী নার্সদের সাথে অশোভন আচরণ করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।
শুধু মামলাতেই ঘটনা থামেনি। উত্তর প্রদেশের কট্টর হিন্দুত্বাবাদী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মামলার আসামি তাবলিগ সদস্যদের “মানবতার শত্রু” বলে আখ্যা দিয়েছেন। সেইসাথে তাদের বিচারের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারি করেছেন।
এর অর্থ, বিচার ছাড়াই তাদেরকে কয়েক মাস আটক করে রাখা যাবে।
“মানবতার শত্রু”
হাসপাতালের প্রধান মেডিকেল অফিসার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বেশ কজন তাবলিগ সদস্য কোয়ারেন্টাইনের শর্ত না মেনে হাসপাতাল কর্মীদের বিপদগ্রস্ত করছে, তারা ডাক্তার-নার্সদের লক্ষ্য করে কটূক্তি করছে, ওয়ার্ডের ভেতর খালি গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কর্মীদের কাছে থেকে সিগারেট চাইছে।
এ ধরণের কিছু ভিডিও ফুটেজও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে।
এর পরই গাজিয়াবাদ পুলিশ বেশ কজন তাবলিগ সদস্যের বিরুদ্ধে মামরা দায়ের করে, এবং সাথে সাথে সরব হয়ে উঠেছেন উত্তর প্রদেশের কট্টর হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
তিনি ঐ তাবলিগ সদস্যদের “মানবতার শত্রু” বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, “তারা আইন মানে না, নির্দেশ মানে না। তারা নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে যে আচরণ করেছে তা জঘন্য অপরাধ। তারা মানবতার শত্রু।”
উত্তর পদেশের মূখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি কজন তাবলিগ সদস্যকে লক্ষ্য করে বলেন, “এরা মানবতার শত্রু”
পরপরই তিনি এদেরকে বিচারের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা আইনে প্রয়োগের নির্দেশ দেন।
ওদিকে গত মাসে দিল্লিতে সম্মেলনের পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া তাবলিগ সদস্যদের খুঁজতে মসজিদে, বাড়িতে হানা দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) হরিয়ানা রাজ্যের পালওয়াল নামে একটি মসজিদে হানা দিয়ে পুলিশ বেশ কজনকে কোয়ারেন্টিনে নিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে এদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস নিশ্চিত হয়েছে।
দিল্লির তাবলিগ সম্মেলনে অংশ নেওয়া লোকজন এবং তাদের মাধ্যমে ভারতে অন্তত চারশ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। তাদের বেশ কজন মারাও গেছে।
সূত্র : বিবিসি