শুল্ক-করমুক্ত সুবিধা নিয়ে মাছের খাবার হিসেবে শূকরের মাংস, বর্জ্য ও হাড়যুক্ত ‘মিট অ্যান্ড বোন মিল’ (এমবিএম) আমদানির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটি বলছে, এসব খাবার মুরগি ও মাছকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ালেও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া, এসব পণ্য ‘আমদানি নিষদ্ধের’ তালিকায় থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও আমদানির শর্ত ভঙ্গ করেছে।
এনবিআর-সূত্র বলছে, রাজধানীর নিকটবর্তী পানগাঁও কাস্টম হাউজে ‘মিশাম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান শূকরের বর্জ্যযুক্ত মাছের খাবার আমদানি করে। পরে ওই চালান আটক করা হয়।
পানগাঁও কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ওই চালান আটকের পর পণ্যগুলো ল্যাব পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় এসব খাবারে এমবিএমের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে, এসব পণ্যের চালান ছাড় করাতে তদবির করছে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
মাছের খাবার হিসেবে আমদানি এসব পণ্যে এমবিএমের প্রমাণ পাওয়ায় ‘মিশাম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় পানগাঁও কাস্টম। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে এনবিআর। তদন্তে বেরিয়ে আসে—একই প্রতিষ্ঠানের আরও তিনটি চালান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজেও আটক করা হয়। যা এক বছরের বেশি সময় ধরে আটকে আছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও কোনো জবাব দেয়নি মিশাম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
তবে, বরাবরই এমবিএম আমদানির অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আমদানিকারক এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুম মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে কোনো কথা বলবো না। আপনার সঙ্গে কেন কথা বলবো?’
প্রসঙ্গত, মাছের খাবার আমদানির ক্ষেত্রে ১৭টি শর্ত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আমদানি পণ্যে ক্ষতিকারক ক্রোমিয়াম, ট্যানারি উপজাত ও মেলামাইন, শূকরজাত উপাদান থাকতে পারবে না।
পানগাঁও কাস্টম হাউজে দাখিল করা বিল অব এন্ট্রি সূত্রে জানা গেছে, মিশাম এগ্রো চালানটি চট্টগ্রামে খালাস হওয়ার কথা। কিন্তু তারা চট্টগ্রামের পরিবর্তে পানগাঁও দিয়ে খালাসের চেষ্টা করে।
মৎস্য অধিদপ্তরের চিঠি অনুযায়ী, চালানটি চট্টগ্রাম দিয়ে ছাড় করার কথা ছিল। কিন্তু অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই পাঁনগাও কাস্টম হাউজে বিল অব এন্ট্রি জমা দিয়ে পণ্য বের করার চেষ্টা করে মিশাম এগ্রো।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পানগাঁও কাস্টম হাউস কমিশনার ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, ‘এখানে কাস্টমস আইন, আমদানিনীতি ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। আইনের বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না। এরপরও আমদানিকারক অন্যায়ভাবে আমাদের চাপ দিচ্ছেন। একই আমদানিকারকের তিনটি চালান চট্টগ্রামে আটক। সব চালানেই শূকরজাত উপাদান পাওয়া গেছে।’
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জের প্রতিষ্ঠান মিশাম এগ্রো ভিয়েতনাম থেকে ‘ফিশ ফিড’ ঘোষণা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ মে ১ লাখ ৫১ হাজার ২০০ কেজি পণ্য আমদানি করে। ওই পণ্যের চালান খালাসের জন্য মর্নিং স্টার ইন্টারন্যাশনাল নামে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ)-এর মাধ্যমে এই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। সিঅ্যান্ডএফ ও আমদানিকারকের সহযোগিতায় জেলা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর কাস্টমস কর্মকর্তারা চালান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনের সুপারিশের আমদানিনীতি অনুযায়ী পণ্যগুলো রাসায়নিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাভারের মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় এসব পণ্যে এমবিএমের অস্তিত্ব পাওয়া যায় বলেও এনবিআর সূত্র জানায়।