কাগজ ডেস্ক :
এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঠিক করতে যে বেগ পেতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। টিম ম্যানেজমেন্ট বনাম হেড কোচের স্নায়ুযুদ্ধ তো চলছেই, একই সঙ্গে দ্বৈরথ চলছে টিম ম্যানেজমেন্টের ভেতরও।
ইস্যুটা হচ্ছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে এশিয়া কাপের চূড়ান্ত স্কোয়াডে রাখা। এ নিয়ে বোর্ড পরিচালকদের ভেতর রীতিমতো ‘দড়ি-টানাটানি’র মতো পরিস্থিতি।
বোর্ডের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে পরিচালকদের ভেতর দুটি ভাগ হয়ে গেছে রিয়াদকে দলে ভেড়ানো ইস্যুতে। এক পক্ষ চাইছে রিয়াদকে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে রাখতে, অপর পক্ষ রয়েছে পুরো বিপরীতমুখী অবস্থানে।
আর এই দুই পক্ষের টানাটানিতে চূড়ান্ত স্কোয়াড সাজানো নিয়ে বিপাকে টিম ম্যানেজমেন্ট। সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক জটিলতার।
রিয়াদকে দলে রাখার সিদ্ধান্তে বদ্ধপরিকর বোর্ড কর্তাদের যে পক্ষ, তারা যুক্তি দেখিয়েছেন দলের নম্বর সেভেন পজিশনে সেট ব্যাটার না থাকার বিষয়টিকে।
জাতীয় দলের ব্যাটিং অর্ডারের সাত নম্বর পজিশন নিয়ে বেশ বিপাকেই রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে হেড কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে জাতীয় দল থেকে একপ্রকারে ‘সরিয়েই’ রাখা হয়েছে। আর তার রিপ্লেসমেন্টে এখনও উপযুক্ত কাউকে খুঁজে পায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট।
যেহেতু সামনে বিশ্বকাপ, সে কারণে এই সাত নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটিং পজিশনটা স্বভাবতই টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। আর সে কারণেই টিম ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ডের একটি অংশ চাচ্ছে অন্তত এশিয়া কাপে রিয়াদকে বাজিয়ে দেখতে। যেহেতু হাতে আপাতত আর কোনো অপশন নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের এক পরিচালক আরটিভিকে বলেন, ‘দেখুন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মতো না। এখানে অভিজ্ঞতার দাম আপনাকে দিতেই হবে। রিয়াদ কিন্তু অনেক সংকটাপন্ন মুহূর্তে আমাদের জিতিয়েছে। অসংখ্য নজির রয়েছে। এখন ফিল্ডিং খারাপ হতেই পারে। তাই বলে তো আপনি অভিজ্ঞতার বিষয়টিকে ফেলে দিতে বা উপেক্ষা করতে পারবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ক্রিকেটে কোনো দলের হুট করেই ব্যাটিং লাইন আপে ধস নেমে আসতেই পারে। রিয়াদ এমন পরিস্থিতিতে সাপোর্ট দেওয়ার মতো ক্রিকেটার। ওর ওপর ভরসা করা যায়। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমি চোখ বন্ধ করেই বলতে পারবো ওকে স্কোয়াডে নেওয়াটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এই সময় নতুন কাউকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার চেয়ে পুরাতন ও পরীক্ষিত কাউকে দায়িত্ব দেওয়াই উচিত হবে।’
সাত নম্বরে নেমে ব্যাটিং করে হাজারি ক্লাবে নাম লেখানো ক্রিকেটার বিশ্বে রয়েছেন ১৫জন। এদের ভেতর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের গড় সবচেয়ে বেশি। ৮১ ম্যাচে রিয়াদের গড় ৩৪.৭১।
এদিকে রিয়াদকে দলে না রাখার কারণ হিসেবে বোর্ড কর্তাদের অপর পক্ষের যুক্তি মিডল অর্ডার ব্যাটারের ফিল্ডিংয়ের দুর্বলতা ও স্ট্রাইক রেট। সাত নম্বর পজিশনে ডানহাতি এই মিডল অর্ডার ব্যাটারের স্ট্রাইক রেটের গড় ৭৭.২৯। আর এটিকেই স্লগে ব্যাটিংয়ের দাবি মেটাতে ব্যর্থতা বলে মনে করছেন পরিচালকদের একটি পক্ষ। আর সে কারণেই রিয়াদকে দইলে চাননা তারা।
পরিসংখ্যান বলছে তাদের যুক্তি সঠিক। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সাতে ব্যাটিংয়ে নেমে একজন ক্রিকেটারের ওভার প্রতি নেয়া রানের গড় ৫ দশমিক ১৫। সেখানে রিয়াদের সাতে নেমে ব্যাটিংয়ের গড় ৪ দশমিক ৬৫ রান করতে পেরেছেন।
এ প্রসঙ্গে বোর্ডের এক কর্তা বলেন, ‘রিয়াদ যেই পজিশনে ব্যাটিং করে সেখান থেকে বর্তমান সময়ের ক্রিকেটাররা আরও বেশি রান করছে। আমাদের নিজেদেরও এমন অনেক ক্রিকেটার এদিক থেকে রিয়াদের চেয়ে এগিয়ে। কোচ যেমন চাচ্ছে সেই চাহিদা অনেকেই পূরণ করছে যেটা ও পারছে না।’