চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাতে ৫ শতাংশ বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। তারা বলছেন, করোনায় আয়-উপার্জন কমে গেছে অনেকের। এই অবস্থায় মোবাইলফোন-ইন্টারনেটে বাড়তি চার্জ আরোপ উচিত হয়নি। একইসঙ্গে তারা এই সিদ্ধান্তকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ বলেও মনে করেন।
এর আগে গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইলফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এর ফলে এই খাত থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বাড়তি আয়ের পরিকল্পনা করেছে সরকার। আর এই প্রস্তাব পাস হলে মোবাইলফোনের প্রতি ১০০ টাকায় গ্রাহকরা সেবা পাবেন মাত্র ৭৫ দশমিক শূন্য ৩ টাকা। বাকি ২৪ দশমিক ৯৭ টাকা কাটা যাবে রাজস্ব খাতে। এরই মধ্যে বাড়তি হারে টাকা কাটা শুরু করেছে দেশের মোবাইলফোন অপারেটরগুলো।
এদিকে, বাজেট পাশের আগেই বাড়তি চার্জ কাটায় মোবাইলফোন অপারেটরগুলোকে গত ১৩ জুন ইমেইলে কড়া বার্তা দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ই-মেইলে বলা হয়, ‘বাজেট পাস হবে ১ জুলাই। তার আগেই এই নতুন কর কেন কার্যকর করা হলো?’ বিটিআরসির ই-মেইলে আরও বলা হয়, ‘বাজেট পাশের আগে কলচার্জ বাড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ১৫ জুনই বিটিআরসির ওই ইমেইলের জবাব দেয় ‘অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ’ (অ্যামটব)। জবাবে অ্যামটব বলে, ‘আমরা শুধু দেশের আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছি।’
মোবাইল গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কর বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায়ে সরকার যে পরিকল্পনা করেছে, তা ঠিক নয়। বরং কর বাড়ানোর ফলে ব্যবহার কমবে। তাতে রাজস্বও কমবে। আবার গ্রাহকরাও হয়রানির শিকার হবেন।’
একই অভিমত জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফসান হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে মোবাইলফোন কথা হতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ভিডিও কলে কথা বলতে হয়। কারণ বাড়ির মানুষ বেশি উদ্বেগে থাকে। ডাটার খরচ বাড়লে আমাদের মতো হিসাব করে চলা মানুষের জন্য সমস্যা হবে।’
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন কাজী সুমন। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইলফোনের ব্যবহার আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। অল্প দূরত্বেও কথা বলার জন্য এখন মোবাইলফোন ব্যবহার করতে হয়। বাড়তি শুল্ক আরোপ এই সময়ে অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত।’
অ্যামটব সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট টেলিযোগাযোগ খাতকে আরও একবার ডিজিটাল বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ায় সীমিত আয়ের লোকজন মোবাইলফোন সেবা থেকে আরও দূরে সরে যাবে। যা ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এই বার্তা খুবই নেতিবাচকভাবে যাবে। গ্রহক ও আমাদের স্টেকহোল্ডারদের ওপর চাপ না দিয়েও সরকার এই খাত থেকে আরও বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারতো।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদেরও এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা ছিল। ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল না। আমরা সংশোধনের বিষয়ে কথা বলেছি।’ তবে সার্বিক বিষয় রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে যুক্ত বিভাগগুলোর ওপর নির্ভর করছে বলেও তিনি মনে করেন।