ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট ও ব্যালট বাক্স রাতেই হলগুলোতে পাঠিয়ে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোট, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ উপাচার্যের কার্যালয়ে সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁর বরাবর স্মারকলিপি দেন।
আগামীকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এবার মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। ডাকসুতে ২৫টি পদের জন্য লড়ছেন ২২৯ প্রার্থী। আর ১৮টি আবাসিক হলে মোট প্রার্থী ৫০৯। একেকটি হলে ১৩টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ডাকসুতে প্যানেল দিয়ে নির্বাচন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম সংগঠনগুলোর জোট, কোটা আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ-বিসিএল, ছাত্র মৈত্রী, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মুক্তিজোট, জাতীয় ছাত্রসমাজ ও বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন।
কেন্দ্রগুলোতে কখন ব্যালট ও ব্যালট বাক্স পাঠানো হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচন ও ডাকসু নির্বাচনের কর্মকর্তা আবদুল বাছির প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলোর প্রক্রিয়া চলছে। আরও দুই-তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। এরপরই আমরা হলগুলোতে পাঠিয়ে দেব।’
অনেক প্রার্থীর দাবি অনুযায়ী ব্যালট ও ব্যালট বাক্স সকালে বা ভোরে পাঠানো যায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। হল কর্তৃপক্ষেরও কিছু কাজ আছে। এ জন্য তাদের সময় দিতে হবে। তাই ব্যালট ও ব্যালট বাক্স আগে পাঠানো হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন পদক্ষেপে প্রার্থীরা আস্থা পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইল আবদুল বাছির বলেন, ‘সে জন্য তো তোমরা আছই। তোমরা তোমাদের রিপোর্ট করবে। আমরা মনে করি তোমাদের আশঙ্কা একটি শঙ্কা, আমাদের জন্য শঙ্কা। কিন্তু কিছু হবে না ইনশাল্লাহ।’
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে স্টিলের ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হবে। এই অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, সিনেট কমিটি, সিন্ডিকেট, রেজিস্ট্রার গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনে এই ব্যালট বাক্সগুলোই ব্যবহার করা হয়। এখন পর্যন্ত তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি।’
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী লিটন নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের গ্রহণের সময় চার ঘণ্টা বাড়িয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা, তথ্য সংগ্রহে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য অবাধ সুযোগ, ভোটকেন্দ্রে আসতে ভোটারদের নিরুৎসাহিতকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগের অনুমতি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও ভোটারদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেওয়া, ভোটের দিন সকালের আগে ব্যালট কেন্দ্রে না পাঠানো এবং প্রতিটি রুটে সকাল থেকে ন্যূনতম ১০টি বাসের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে তারা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। উপাচার্য তাদের কথাগুলো শুনেছেন, তবে কোনো আশ্বাস দেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। এসব সংগঠনের নেতারা বলছেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে তাঁরা হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করাসহ যেসব দাবি তুলেছিলেন, সেগুলো মানা হয়নি; বরং প্রশাসনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ছাত্রলীগ লাভবান হয়েছে। এমন অবস্থায় ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সব সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে একধরনের শঙ্কা কাজ করছে।
গতকাল শনিবার নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা।
নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।