লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ চন্ডিপুর গ্রামে হতদরিদ্রদের মাঝে খাদ্যবান্দব কর্মসূচির ১০টাকা কেজি দরের ২৯ বস্তা চাল অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ডিলার আবুল কাশেম দাবী করেন, আমি ডিলার হলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের দেয়া তালিকা অনুযায়ী তা বিক্রি করা হয়েছে। জব্দকৃত চালসহ ২৯ বস্তা চাল চেয়ারম্যানের নির্দেশে তালিকাবিহীন হতদরিদ্র অন্য ত্রিশজন লোকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
রামগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন ঘটনার সত্যতা পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই’র) কর্মকর্তারা ফতেহপুর গ্রামের দর্জি বাড়ীসহ তিনটি বাড়ী থেকে ৭বস্তা চাল উদ্ধার করেন।
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার উপ-পরিচালক মানিক চন্দ্র দে জানান, আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে আজ শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের দর্জি বাড়ীর মিলন, বাবুল, স্বপন, বসাজী মোল্লা বাড়ীর মো. বাবুল, ইউসুফ ও নোয়াবাড়ীর মো. হোসেনসহ ৭টি ঘর থেকে প্রতিটি ৩০ কেজি ওজনের ৭বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। রামগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে জব্দকৃত চালের বস্তাগুলো খাদ্যগুদামে নেয়া হয়েছে।
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ফিল্ড অফিসার রাজিব ভৌমিক জানান, সরকারী নিদের্শনা অনুযায়ী রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০টাকা কেজি দরে কার্ডধারী হতদরিদ্রদের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ডিলার আবুল কাশেম পাটোয়ারী কার্ডবিহীন ২৯ বস্তা চাল অন্যত্রে বস্তাপ্রতি ৫শ টাকা করে বিক্রি করে দেয়।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের ডিলার আবুল কাশেম জানান, আমরা তালিকা অনুযায়ী গত কয়েকদিন থেকে ১০টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করলেও ৩০জন কার্ডধারী হতদরিদ্র লোক চাল নিতে আসেনি। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবহিত করলে চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ভূঁইয়া হতদরিদ্রদের নতুন আরেকটি তালিকা অনুযায়ী চাল বিক্রি করার কথা বললে আমি তা পালন করি। তবে এসময় তিনি এসময় যাদের কাছে চাল বিক্রি করেছেন তার একটি তালিকা সাংবাদিকদের দেখান। এসময় তিনি ৩শ টাকার স্থলে কেন ৫শ টাকা করে নেয়া হয়েছে তার কোন সদুত্তোর দেননি।
রামগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ঘটনাটি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। সেখানে গিয়ে কয়েকটি বাড়ী থেকে আমরা ৭বস্তা চাল জব্দ করে সরকারী গুদামে আনা হয়েছে। এসময় স্থানীয় লোকজন আমাদের জানান, ১০টাকা কেজি দরের ৩ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ৩শ টাকা হলেও ডিলার আবুল কাশেম অন্য লোকদের কাছে ৫শ টাকা করে নিয়েছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, আমি তো আর ডিলার না। নিয়মানুযায়ী কার্ডধারী ২৯জন হতদরিদ্র লোক চাল নিতে না আসায় তাদের স্থলে নতুন হতদরিদ্রদের তালিকা করে চালগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তবে তিনি ৩শ টাকার স্থলে বস্তাপ্রতি ৫শ টাকা নেয়ার ব্যপারে কিছুই জানেন বলে জানান।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, কার্ডধারী কেউ যদি চাল নিতে অপারগতা প্রকাশ করে বা মৃত্যুজনিত কারণে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না নেয় সেক্ষেত্রে ঐ কার্ডধারী ব্যক্তিদের স্থানে নতুন করে অসহায় হতদরিদ্রদের নাম প্রতিস্থাপন করা যায়। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা সংশ্লিষ্ট ডিলার এ ব্যপারে আমাদের কিছু না জানিয়ে চালগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ব্যপারে আমরা ডিলারের ডিলারশীপ বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।