দেশে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তদের সংখ্যা কমার কোনো লক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও তৈরি পোশাক কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং খাবারের দোকান খোলার সাথে সাথে চলতি সপ্তাহে অনেককে লকডাউন পরিস্থিতি ভেঙে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা উড়িয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে সংক্রমণের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির মারাত্মক ঝুঁকি উঁকি দিচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে নগরীর রাস্তাগুলোতে চলাচলকারী মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মতিঝিলসহ বেশ কিছু এলাকায় ট্র্যাফিক জ্যামেরও দেখা মিলেছে।
অন্যদিকে, নগরীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজারে ঘুরে সংবাদদাতারা বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কিত নির্দেশনা অমান্য করে প্রচুর জনসমাগম দেখতে পান। মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে প্রয়োজনীয় নিরাপদ এক মিটার দূরত্ব বজায় না রেখেই দোকানগুলোর সামনে ক্রেতাদের জড়ো হতে দেখা গেছে।
ভাইরাস সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ না থাকলেও, বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনার পরেও গত ২৬ এপ্রিল থেকে কয়েক শতাধিক পোশাক কারখানায় উৎপাদন আবার শুরু হয়েছে। নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে পোশাক কারখানার কর্মীরাও রয়েছেন।
সীমিত পর্যায়ে শিল্প ও কারখানাগুলো খোলার বিষয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অংশ নেয়ার পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে গার্মেন্টস মালিকদের বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যদি কোনো কারখানার অনেক শ্রমিকের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়ে থাকে, তবে সে প্রতিষ্ঠানটি আবার কিছুদিন বন্ধ থাকবে।
এদিকে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শ্রমনির্ভর তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সতর্ক করেছেন এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তারা বলছেন, শাটডাউন নমনীয় করা এবং সীমিত আকারে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার অনুমতি দেয়ার বিষয়ে খুব তাড়াহুড়া করা হয়েছে। যদিও ভাইরাস সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ যদি ঘরে থাকেন তবে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আট সপ্তাহ সময় লাগবে, আর যদি ৯০ শতাংশ মানুষ ঘরে থাকেন তবে বিস্তার নিয়ন্ত্রণে এক মাস সময় লাগবে। একইভাবে, ঘরে থাকা মানুষের সংখ্যা যদি শতকরা ৭০ শতাংশে নেমে আসে তবে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ছয় মাস সময় লাগবে।
যোগাযোগ করা হলে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেন, পুনরায় চালু হওয়া কারখানাগুলো সীমিত সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। মূলত যারা ‘কারখানার আশপাশে বসবাস করছেন’ তাদের নিয়ে।
গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর খাবারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইফতার সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, পুলিশ নগরবাসীকে বাসায় রাখার চেষ্টা করছে। এমনকি, ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো অহেতুক বাইরে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন নগরবাসীকে জরিমানাও করে চলেছে।
তিনি বলেন, ‘নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে নগরবাসীকে বাসায় থাকতে হবে। তারা (নগরবাসী) সহযোগিতা না করলে একা পুলিশের পক্ষে তাদের বাড়িতে রাখা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা পুরোপুরি নিশ্চিত করা অসম্ভব।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করার লক্ষ্য গত ২৩ মার্চ সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে পাঁচ দফায় বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির ঘোষণা করা হয়।
গত সোমবার রমজান ও ঈদুল-ফিতরের কথা বিবেচনা করে সরকার ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা বজায় রেখে ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির দিনগুলোতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দেয়।
সরকারের বর্ধিত সাধারণ ছুটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, গণপরিবহন পরিষেবাও ১৬ মে অবধি বন্ধ থাকবে। সূত্র : ইউএনবি