করোনাভাইরাসের কারণে পোশাকের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে চলতি মাস থেকেই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এক্ষেত্রে আইন যথাযথভাবে মানা হচ্ছে কি না এবং শ্রমিক ছাঁটাইয়ের যৌক্তিক কারণ আছে কি না তা জানতে চাচ্ছে সরকার।
বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হকের শ্রমিক ছাঁটাই সংক্রান্ত ঘোষণার পর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে পুরো বিষয়ে খোঁজ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবার (৬ জুন) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের জাতীয় আয়ে পোশাক খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এ খাতের শ্রমিকদের জীবিকার কথা ভেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। এর মাত্র তিন মাসের মধ্যে পোশাক মালিকরা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। আমরা বরাবরই মালিকপক্ষকে বলে এসেছি, কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে যেন কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই না করা হয়।’
মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘পোশাক খাতের কারণে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ যেমন পরিচিত, তেমনই এ খাতের শ্রমিকদের বিষয়ে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের যেন দুর্নাম না হয়, এ বিষয়ে সরকার বরাবরই যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে আসছে। কারণ, এর সাথে দেশের সুনাম বা ইমেজ জড়িত।’
রুবানা হক বলেছিলেন, ‘করোনা মহামারির প্রভাবে পোশাকের ক্রয়াদেশ ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সে কারণেই চলতি জুন থেকে কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে।’
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের জন্য কোনো তহবিল গঠন করা যায় কি না, সরকারের সঙ্গে বসে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো তহবিলের বিষয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা হয়নি।’
ছাঁটাইয়ের অন্যান্য কারণের বিষয়ে রুবানা হক বলেছিলেন, ‘২ হাজার ২৭৪টি কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৯২৬টি চালু আছে, বাকিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। করোনায় ৪২ হাজার কোটি টাকার ধাক্কা খাবে পোশাক খাত। করোনা মোকাবিলায় এখন মানুষ সুস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি, পোশাকে নয়। ফলে ৫৫ শতাংশ অর্ডার কমে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে ৫৫ ভাগ বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে তুলে নিয়েছে ২ শতাংশ। করোনার কারণে পোশাক খাতে ছাঁটাই হবে।’
এদিকে, বিজিএমইএর সভাপতির এ ঘোষণা শ্রমিক সমাজকে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু। তিনি বলেন, ‘সরকার এবং মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, করোনা মহামারির সময়ে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই হবে না এবং কোনো কারখানা লে-অফ হবে না। সরকারের প্রণোদনা পাওয়ার পরও এমন সিদ্ধান্ত সরকার এবং শ্রমিকদের সাথে স্পষ্ট প্রতারণা।’
বাংলাদেশ কনফেডারেশন অব লেবারের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন আকন্দ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক ছাঁটাই হলে জাতীয় দুর্যোগ আরো বাড়বে। আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম, শ্রমিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা, রেশনিং, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিল্পাঞ্চলভিত্তিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু এর মধ্যে বিজিএমইএর এমন সিদ্ধান্ত পোশাক খাতের ওপর বড় ধরনের নির্মম আঘাত বলে আমরা মনে করছি।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শ্রম অনুবিভাগ) ড. মো. রেজাউল হক বলেন, ‘বিজিএমইএর সভাপতি কোন গ্রাউন্ডে এ ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা এখনো জানি না। মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’