বেশ কয়েকশো’ রোহিঙ্গা বহনকারী দুটো নৌকাকে বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না বলে পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই বাংলাদেশে ভিড়তে দেয়া হবে না।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে যে গত কয়েকদিন ধরে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা বহনকারী দুটি নৌকা মালয়েশিয়ায় ঢুকতে না পেরে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করছে। বার্তা সংস্থাগুলো বলছে, এসব নৌকা বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে।
এমন প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গভীর সমুদ্রে ভাসমান রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের কোন দায়িত্ব নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কোন দায়বদ্ধতা নাই ওদের গ্রহণ করার। আমরা চাই না মানুষ মরুক। কিন্তু অন্যদের অগ্রসর হয়ে আসতে হবে।”
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে অবস্থানরত নারী, পুরুষ এবং শিশুদের ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি বলেছে, সাগরে অবস্থানরত শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপারে সকল রাষ্ট্রের অধিকতর সমন্বয় এবং দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া প্রয়োজন।
লন্ডন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, সমুদ্রে আটকে পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যেন বাংলাদেশ উদ্ধার করে এবং তাদের গ্রহণ করে।
সংস্থাটি বলছে, দুটি নৌকায় প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। তারা মালয়েশিয়ায় ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে এখন বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় আছে।
রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করার বিষয়ে অন্য দেশগুলো যাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করে সেজন্যও আহবান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গত সপ্তাহে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা ভর্তি একটি ট্রলারকে বাংলাদেশে ভিড়তে দেয়া হয়েছিল। সে ট্রলারটি মালয়েশিয়ায় ঢুকতে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রায় দুই মাস সমুদ্রে ছিলেন রোহিঙ্গারা।
খবরে বলা হচ্ছে যে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কারণে মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাগুলোকে সেদেশে ভিড়তে দিচ্ছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দিতে চায়।
“কয়দিন পরে পরে মায়ানমারের লোকগুলো সমুদ্রে যায় এবং খুব কষ্টে থাকে। তখন আমাদের বলা হয়, আপনারা ওদের নিয়ে নেন। আমাদের ইউএনএইচসিআর অনুরোধ করে – ওরা মরে যাচ্ছে আপনারা নেন,” বলছিলেন মি. মোমেন।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও ৩৯৬ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। কেউ যদি গভীর সমুদ্রে থাকে তাহলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব হচ্ছে গভীর সমুদ্রের আশপাশের দেশগুলোর।
তিনি বলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের এই এলাকায় যেসব দেশ আছে – থাইল্যান্ড বলেন, মালয়েশিয়া বলেন, ভারত বলেন, ফিলিপিন্স বলেন – তাদের কাছে কেউ গিয়ে রিকোয়েস্ট করে না এদের (রোহিঙ্গাদের) নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাগুলো বাংলাদেশের জলসীমায় নয়, বরং এরা অবস্থান করছে গভীর সমুদ্রে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর সামালোচনা করে বলেন, এই সংকট সমাধানের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের উপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করছে না।
ইউরোপের দেশগুলো মিয়ানমারের উপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ না করে, উল্টো তাদের নানা রকম বাণিজ্যিক সুবিধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের একবার নিয়েছি বলে সব সময় নিতে হবে? ইজ ইট দ্য রুল অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এটাই কি পৃথিবীর নিয়ম)?” বিবিসি।