ধেয়ে আসা প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলের নদ-নদীতে তুমুল তুফান বিরাজ করছে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকা পানি ভাটায় নামতে শুরু করলেও তুফান কমছে না। প্রবল বেগে আছড়ে পড়ছে জীর্ণশীর্ণ বেড়িবাঁধের উপর। একই সঙ্গে সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী থেমে থেমে বৃষ্টির সাঙ্গে প্রবল বেগে ঝড় বইছে।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু গাছগাছালি উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাতের জোয়ার। উপকূলবাসী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়া বেড়িবাঁধ রাতের জোয়ারে টিকবে কিনা তা নিয়ে রীতিমতো আতংকে রয়েছে।
এদিকে, আম্পানের প্রভাবে সাতক্ষীরায় দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। দুপুরে ঝড়ো হাওয়া উঠতে থাকে। সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখার সময় জোরালো দমকা হাওয়া বইছিল এবং নদনদীর পানি আছড়ে পড়ছিল বেড়িবাঁধের ওপর। উপকূলের মানুষ রাতের ভরা অমাবস্যার মধ্যে আম্পানের সম্ভাব্য আঘাতের সময় জোয়ার উঠলে জীবন ও সম্পদের সমূহ ক্ষতি হতে পারে এমন আশংকা করছেন।
শ্যামনগর ও আশাশুনির বিভিন্ন ইউনিয়নের বিশেষ করে গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও শ্রীউলা ইউনিয়নে ৪৫টিরও বেশি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে গাবুরার নেবুবুনিয়া, নিজামিয়া মাদ্রাসার সামনে ও পদ্মপুকুরের চাউলখোলা, খুটিকাটা, কামালকাটি ও চন্ডিপুরে কপোতাক্ষ এবং খোলপেটুয়ার পানি বেড়িবাঁধ উপচে পড়তে শুরু করেছে।
পদ্মপুকুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, এসব স্থানে তারা বালির বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল জানান, তার এলাকার দাতিনাখালি, ভামিয়া ও দুর্গাবাটির তিনটি পয়েন্টে খোলপেটুয়া নদীতে পানি বেড়ে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী হয়ে উঠেছে উত্তাল। এসব নদী এখন ক্ষিপ্র রাক্ষুসীর রূপ নিয়েছে।
ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে এ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন মানুষ।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ঝুঁকির মধ্যে থাকা ২ লাখ ৮৯ হাজার মানুষকে ১৮৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৯ হাজার গবাদি পশুর জীবন রক্ষায়ও এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
তিনি জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গত মানুষকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী মায়েদের সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আম্পানের প্রভাবে বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকে। সব নদীতেই পানি অনেকটাই বেড়েছে। আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের হিজলিয়া, হরিশখালি, চাকলা, কুড়িকাহনিয়া, শ্রীপুর এবং কোলায় বেড়িবাঁধ ভাঙনের মুখে। সেখানে গ্রামবাসী বাঁধ ঠেকানোর কাজ করছেন। একই উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর, আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছোট এবং শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা ও হাজরাখালিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাসী।
গাবুরা ইউপি মেম্বার গোলাম মোস্তফা জানান, তার এলাকায় খোলপেটুয়া এবং কপোতাক্ষ নদীর পানি ওভার ফ্লো হয়েছে। সেখানে বাঁধ ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সুন্দরবনের সীমান্ত নদী কালিন্দী ও মাদার নদীর পানি ফেঁপে বনে ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে উপকূলীয় এলাকার শত শত চিংড়িঘের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঘেরের ছোট ছোট রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে বলে চিংড়ি চাষিরা জানিয়েছেন।