সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযানের’ পরিকল্পনা করেছে, স্থানীয় প্রশাসন কয়েক ডজন গ্রামপ্রধানকে এমন সতর্কবার্তা দেয়ার পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের হাজার হাজার গ্রামবাসী ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির একজন আইপ্রণেতা ও একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী।
কিন্তু গত শনিবার রাতে দেশটির সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সীমান্তবিষয়ক কর্মকর্তারা একটি উচ্ছেদ আদেশ জারি করলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এই আদেশ জারির বিষয়টি স্বীকার করলেও এর প্রভাব অল্প কয়েকটি গ্রামে পড়েছে বলে দাবি করেছে।
বুধবার লেখা একটি চিঠিতে গ্রামপ্রধানদের ওই সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল। রাথেডাং পৌরসভার প্রশাসক অং মাইন্ট থেইনের স্বাক্ষরিত চিঠিটিতে গ্রামপ্রধানদের বলা হয়েছে, পৌরসভার কায়ুকতান গ্রাম ও এর নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে বিদ্রোহীদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে এমন সন্দেহে সেখানে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে তাকে (প্রশাসককে) অবহিত করা হয়েছে।
প্রশাসন থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘বাহিনীগুলো ওই গ্রামগুলোতে শুদ্ধি অভিযান চালাবে। অভিযান চলাকালে ‘এএ’ সন্ত্রাসীদের সাথে যদি লড়াই শুরু হয় তাহলে গ্রামে না থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে থাকবেন।’ এখানে ‘এএ’ বলেতে আরাকান আর্মিকে বোঝানো হয়েছে, এরা রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যারা আরাকান নামে পরিচিত রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের বেশি স্বায়ত্তশাসন আদায়ের জন্য লড়াই করছে।
শনিবার মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হতাই ফেইসবুকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার সামরিক বাহিনীকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ পরিভাষাটি ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছিল। লোকজনকে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া চিঠিটি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নতুন অভিযানের আশঙ্কায় কায়ুকতান থেকে ৮০ জন লোক রাথেডাং পৌরসভার অন্য এলাকায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন মিন থান। সেনাবাহিনী তাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মানবাধিকার গোষ্ঠী রাখাইন এথনিক কংগ্রেসের সম্পাদক জ জ হতুন জানিয়েছেন, অন্তত এক হাজার ৭০০ লোক পাশের পন্নাগিয়ুন পৌরসভায় পালিয়ে গেছে।
আরো এক হাজার ৪০০ লোক আশপাশের গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে আর তারা তীব্র খাদ্যসঙ্কটে আছে বলে রাথেডাং পৌরসভা থেকে জানিয়েছেন পার্লামেন্টের স্থানীয় প্রতিনিধি ওও থান নায়িং। বুধবার ওই আদেশ জারির পর থেকে কায়ুকতান ও এর আশপাশের ৩৯টি গ্রামের বাসিন্দারা পালিয়ে যাওয়া শুরু করেছে বলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার গোষ্ঠী বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে। চলতি বছর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এএ’র সাথে লড়াই করছে।
এএ মূলত রাখাইনের বৌদ্ধ নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিদ্রোহী দল। এই দুই পক্ষের লড়াইয়ে এ পর্যন্ত বহু লোকের মৃত্যু হয়েছে এবং হাজার হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সূত্র : রয়টার্স