সকাল ৯টা বাজার আগ থেকেই আসিয়াহ ও জাভেদের মুদি দোকানের বাইরে লম্বা লাইন লেগে যায়। লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগই শ্রমিক ও ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার সার্ভিসের (এনএইচএস) কর্মী। সবাই অপেক্ষায় আছেন, কখন তাদের হাতে বিনামূল্যে হ্যান্ডস্যানিটাইজার-গ্লাভস তুলে দেয়া হবে।
করোনাভাইরাস মহামারিতে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্কটল্যান্ডের মুদি দোকানি মুসলিম দম্পতি আসিয়াহ ও তার স্বামী জাভেদ। তারা স্কটিশ বংশোদ্ভূত।
যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডে ইতোমধ্যে কয়েক ডজন মেডিকেল কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। পারসোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্টসহ (পিপিই) অন্যান্য সুরক্ষা উপকরণের অভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা নয়, বরং মহানুভবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আসিয়াহ ও স্বামী জাওয়াদ।
৩৪ বছর বয়সী আসিয়াহ বলেন, ‘আমরা ভাবলাম মাস্ক বিক্রির বদলে সেগুলো এনএইচএসে দান করাই ভালো। কারণ তাদেরই সেগুলো বেশি দরকার, তারা মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মাস্কের অভাব থাকায় মেডিকেল কর্মীরা টাকা দিতে চাচ্ছিল। কিন্তু আমি তাদের বললাম, কোনো দরকার নেই। তারা খুবই ভালো কাজ করছে। আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারি না।’
মার্চে লকডাউন চলাকালীন আসিয়াহ একদিন দেখেন, এক বৃদ্ধা একটি সুপারমার্কেটের বাইরে কাঁদছেন। কারণ প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহের সামর্থ্য ছিল না তার। সেই সময়ই এ স্কটিশ দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন, তারা নিজেদের সঞ্চয় থেকে পাঁচ হাজার পাউন্ড দিয়ে মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনবেন। আর যাদের সেগুলো দরকার তাদের মধ্যে বিতরণ করবেন।
সেই থেকে গত চার সপ্তাহে স্কটল্যান্ডের ফলকির্ক শহরের এ দুই মহানুভব মানুষ অন্তত তিন হাজার পিস মাস্ক, এক হাজারেরও বেশি খাবারের পাকেট বিতরণ করেছেন।
করোনা মহামারির কারণে চাকরি হারিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অসংখ্য মানুষ। আসিয়াহদের অনেক ক্রেতাই পরিবারের জন্য ঠিকমতো খাবার জোগাড় করতে পারছেন না।
জাওয়াদ বলেন, ‘আমরা যখন খাচ্ছি, তখন তারা কেন অভুক্ত ঘুমাবে? এ কারণে আমরা ফেসবুকে ঘোষণা দেই, বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করব। এরপর থেকে অন্তত দুই-তিন শ’ কল পেয়েছি আমরা।’
ফলকির্ক শহরে ৫৪ বছর ধরে রয়েছেন উইলিয়াম ওয়েলশ। এ বৃদ্ধ জানান, একদিন তার কাছে হ্যান্ডস্যানিটাইজারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে এসেছিলেন জাওয়াদ। সেদিন জাভেদকে ‘আসসালামু ওয়ালাইকুম’ বলে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি।
উইলিয়াম বলেন, ‘জাওয়াদের বিষয়ে যা-ই বলি তা যথেষ্ট হবে না। তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে এই কাজ করছে। তারা যা করছে তা মানুষ কখনোই ভুলবে না, বিশেষ করে বয়স্করা।’
গ্লাসগো কেন্দ্রীয় মসজিদের মহাসচিব ইরফান রাজ্জাক বলেন, ‘যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন দুর্দশাগ্রস্তদের আরো বেশি সহযোগিতা দরকার। মসজিদের পক্ষ থেকে আশ্রয়প্রার্থী, শরণার্থীসহ অন্যদেরও সাহায্য করা হচ্ছে। আমরা কারো ধর্মীয় অবস্থান দেখছি না। বরং যার যা সাহায্য দরকার, তা পূরণের চেষ্টা করছি, কাউকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। অমুসলিমদের কাছ থেকেও অনেক কল পাচ্ছি, বিশেষ করে বয়স্কদের। এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে এক হয়েই একে অপরের সহযোগিতা করতে হবে।’
সূত্র : আলজাজিরা