নারায়ণগঞ্জের মসজিদগুলোতে এখন আর মৃত্যুৱ সংবাদ প্রচার করা হয় না। স্বাভাবিক মৃত্যুতেও লাশ দাফন কাফন এবং জানাজা দেয়াৱ লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। করোনা আতঙ্কের কারণে অনেক মানুষ তাদের স্বজনদের মৃত্যুর খবর পেলে ও দেখতে যায় না। এমনকি প্রতিবেশীৱ মৃত্যুর খবরে কেউ উঁকি দেয় না। করোনার কারণে ভেঙ্গে পড়েছে সামাজিক সৌজন্যতাবোধ।
দিন যতই যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে আতঙ্ক আরো বেড়েই চলছে। জানা যায় একসময় পাড়া-মহল্লার মৃত্যুবরণ করলে প্রথমেই মৃত্যুর সংবাদটি স্থানীয় মসজিদ থেকে মাইকে প্রচার করা হতো। মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হতো মৃত্যুর সংবাদ। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেয়া হতো জানাযার সময় ও স্থান। প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারীদের মৃত্যু সংবাদ স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণার খবর পাওয়া যায়নি । এমনকি লাশ দাফন কাফন ও জানাযায় আগের মতো লোকজন উপস্থিত থাকেনি।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মোকলেছার (৫৫) নামে এক ডাইং কারখানার শ্রমিক শবে বরাতের রোজা রাখা অবস্থায় হঠাৎ বুকে ব্যথা উঠে নিজ ঘরেই মারা যান।
গত শুক্রবার দুপুরে ফতুল্লার সস্তাপুর গাবতলা এলাকায় এঘটনা ঘটে। স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তানের আহাজারিতে বাড়িওয়ালাসহ আশপাশের কারো মনই গলেনি একটু সহযোগিতার হাত বাড়াতে।
শুক্রবার দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লাশ নিয়ে ঘরেই বসে ছিলেন নিহতের পরিবার। অবশেষে যুগান্তরের ফতুল্লা প্রতিনিধি সাংবাদিক আলামিন প্রধানের উদ্যোগে রাত ১১টায় স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
নিহত মোকলেছার নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর থানার খাতামধুপুর ঠনঠনিপাড়া গ্রামের তফেল মামুদের ছেলে। তিনি ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায় নুর ইসলামের বাড়িতে স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করে একটি ডাইং কারখানায় কাজ করতেন।
নিহতের স্ত্রী লাইলী জানান, তার স্বামী মোকলেছার শবেবরাতের তিনটি রোজা রেখেছেন। বুধবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রেখেই ডাইং কারখানায় কাজ করেছেন।
শুক্রবার তৃতীয় রোজা রেখে ছিলেন, এদিন কারখানা বন্ধ ছিলো তাই বাসায় ছিলেন তিনি। হঠাৎ দুপুরে স্ত্রীকে ডেকে বলেন তার বুক ব্যথা করছে, এ কথা বলেই তিনি বিছানায় শুয়ে পড়েন।
এরপর অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। তখন কান্নাকাটি করে বাড়িওয়ালাকে ডাকাডাকি করলেও করোনা ভাইরাসের মারা গেছে ভেবে আতঙ্কে কেউ আসেনি।
মৃতের শিশু সন্তানরাও অনেককে ডেকেছে, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে মৃতের বড় ভাই এসে রাত ১০টায় স্থানীয় সাংবাদিক আলামিন প্রধানের কাছে গিয়ে মৃত্যুর খবর জানান।
স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার ওই বাড়ির সামনের বাড়িতে মহিউদ্দিন নামে একজন ব্যবসায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন। তার লাশ হাসপাতাল কতৃর্পক্ষই দাফন করেছে। এ মুহুর্তে পাশের বাড়িতে আরেকজনের মৃত্যুতে অনেকেই ভয়ে কাছে যাননি।
সাংবাদিক আলামিন প্রধান বলেন, খবর পেয়ে নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতি পারি তিনি কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলেন না। রোজা অবস্থায় বুকে ব্যথা উঠে তিনি মারা যায়।
বিষয়টি সদর ইউএনও নাহিদা বারিক ও ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেনকে জানানো হয়। তারা লাশটি দাফনের জন্য আমাকে অনুরোধ করেন। এরপর ইউএনও নাহিদা বারিকের সার্বিক সহযোগিতায় শুক্রবার রাত ১১টায় সস্তাপুর-কোতালেরবাগ কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা উজিউল্লাহ জানাজার নামাজ পড়ান।
ইউএনও নাহিদা বারিক জানান, মৃতের পরিবারের কাছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহযোগিতা করা হবে।
তিনি আরো জানান, করোনা ভাইরাস থেকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তবে পাশের কেউ বিপদে পড়লে তাকে যতোটুকু সম্ভব সহযোগিতা করতে হবে।
জানা গেছে গত ৭ এপ্রিল হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছেন সংগীতশিল্পী হিরো সারারাত রাস্তায় পড়ে পড়েছিল তার লাশ করোনা আতঙ্কের কারণে কেউই এগিয়ে আসেনি। পরে স্থানীয় প্যানেল মেয়র আফরোজা হাসান বিভা পুলিশের সহায়তায় লাশ দাফন কাফন ও জানাযার ব্যবস্থা করেন।
গত 8 এপ্রিল শহরের জামতলা এলাকায় বাসায় মারা যান ৭০ বছর বয়সী আফতাব উদ্দিন বার্ধক্যজনিত কারণে উনি মারা গেছে। মারা যাওয়ার পর তার লাশটি ছুঁয়ে দেখেনি পরিবারের সদস্যরা। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর মা মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ৪ জনকে নিয়ে লাশেৱ জানাযা ও দাফন কাফন করেন। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, আফতাব উদ্দিন ঠাণ্ডা ও জ্বরে আক্রান্ত ছিল। করোনা আতঙ্কের কারণে কেউ এগিয়ে আসেনি।