আগামী ১৫ মাসের জন্য কৃষিঋণের সুদহার কমানো হলো। সব ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৪ শতাংশ। তবে বাড়তি ৫ শতাংশ সুদ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করা হবে। চলতি এপ্রিল থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে বিতরণ করা সব কৃষিঋণের সুদহারই এই সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছরের কৃষিঋণ বিতরণের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষিঋণ নীতিমালা করা হয়। চলতি বছরে এমন ২৪ হাজার কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে পরিমাণ কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ওই ঋণ এ সুবিধার আওতায় আসবে না। তবে চলতি এপ্রিল থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত যে পরিমাণ কৃষি ঋণ বিতরণ করা হবে ওই সব ঋণ এ সুবিধার আওতায় আসবে। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে যত কৃষি ঋণ বিতরণ করা হবে ওই পরিমাণের ঋণে কৃষকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে ব্যাংকগুলো। বাড়তি ৫ শতাংশ সুদ ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি দেয়া হবে। প্রসঙ্গত কৃষি ঋণের নীতিমালা অনুযায়ী কৃষি ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হবে ৯ শতাংশ।
গতকাল এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঋণের অর্থ যাতে কোনোভাবেই এ খাতের বাইরে ব্যবহৃত হতে না পারে সে বিষয়টি ব্যাংকগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ আদায়ের বিষয়টিও তাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। প্রতিটি ব্যাংককে এ বিষয়টি তদারকি করার জন্য বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে। প্রতি মাসের ঋণ বিতরণের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে।
কৃষি খাতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা করতে সরকার কৃষকদেরকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। ধান, গমসহ সব ধরনের সবজি ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য সরাসরি কৃষকদেরকে এ ঋণ দেয়া হবে। আগে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এর মধ্যে যেগুলো চলমান রয়েছে সেসব ঋণের বিপরীতে গত ১ এপ্রিল থেকে ৪ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করতে হবে। তবে কোনো ঋণের কিস্তি বকেয়া থাকলে তার বিপরীতে এ স্কিমের আওতায় ঋণ দেয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে প্রচলিত হারে সুদ আরোপ করতে হবে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। এ কারণে মানুষের চলাচল ও সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছে না। এতে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আগামী মৌসুমে কৃষকরা চাষাবাদে নিরুৎসাহিত হতে পারে বা আর্থিক সংকটের কারণে উৎপাদনে যেতে নাও পারে। এমন আশংকা থেকে কৃষকদের বিশেষ প্রণোদনা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ উদ্যোগ নিয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, বর্তমানে ডাল, তৈলবীজ, মসলাজাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষে কৃষকদেরকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হয়। এ কর্মসূচিও চলমান থাকবে। ব্যাংকগুলো পল্লী ও কৃষিঋণ কর্মসূচির আওতায় তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে এ বিতরণ করবে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংককে সুদের বাকি টাকা পরিশোধ করবে।