ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যে তাবলীগ জামাত সদস্যদের গত প্রায় মাসখানেক ধরে বিভিন্ন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে আটক রাখা হয়েছে, তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে চিঠি লিখেছে দিল্লির সংখ্যালঘু কমিশন।
ওই কমিশনের প্রধান জানিয়েছেন, এভাবে দিনের পর দিন তাদের আটকে রাখা শুধু অবৈধই নয় – চরম অমানবিকও বটে। করোনাভাইরাসের কোনও উপসর্গ নেই – তারপরও অন্তত প্রায় হাজার তিনেক তাবলীগ জামাত সদস্যকে দিল্লির বিভিন্ন কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পে মানবেতর পরিস্থিতিতে আটক রাখা হয়েছে বলে ওই কমিশন জানাচ্ছে।
গত মাসের শেষ দিকে দিল্লিতে তাবলীগ জামাতের সদর দফতর মারকাজ নিজামুদ্দিন থেকে পুলিশ ও প্রশাসন রাতারাতি কয়েক হাজার লোককে বের করে দিয়েছিল। তাদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে, সরকারি বাসে চাপিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখা হয় সুলতানপুরী, ওয়াজিরাবাদ, নারেলা ও দ্বারকা-র বিভিন্ন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে।
এর মধ্যে যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা হলেও বাকিরা কিন্তু এখনও সেই সব সেন্টারেই আটকা পড়ে আছেন। এদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েই দিল্লি সরকারের কাছে চিঠি লিখেছেন দিল্লি মাইনরিটি কমিশনের প্রধান জাফারুল ইসলাম খান।
ড: খান এদিন জানান,‘আমাদের বক্তব্য হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র নির্দেশিকা অনুসারে যেখানে দু’সপ্তাহ বা ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা – সেই জায়গায় এই মানুষগুলোকে আপনারা এর মধ্যেই তার দ্বিগুণ সময় আটকে রেখেছেন। সেন্টারে এর মধ্যেই তাদের ২৮ দিন পূর্ণ হয়ে গেছে – এবং আমাদের ধারণা, এরকম আটকে থাকা লোকের সংখ্যা কিছুতেই তিন হাজারের কম হবে না। তো এবার এদের ছেড়ে দিন, নিজের আত্মীয়-পরিজনের কাছে যেতে দিন। হ্যাঁ, এরা নেগেটিভ হলে সে ক্ষেত্রেই ছাড়ুন – আমরা করোনা পজিটিভদের ছেড়ে দেওয়ার কথা মোটেও বলছি না।’
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দর জৈন-কে লেখা ওই চিঠিতে জাফারুল ইসলাম খানের সঙ্গেই স্বাক্ষর করেছেন কমিশনের আর এক সদস্য, কর্তার সিং কোচর। তারা দুজনেই আশঙ্কা করছেন তাবলিগিদের এভাবে দিনের পর দিন আটকে রাখা হলে মুসলিম সমাজে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে এবং সে ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়াও আশ্চর্য নয়।
তা ছাড়া দিল্লির কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলোতে আটক ব্যক্তিদের জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধারও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন তারা।
জাফারুল ইসলাম খানের কথায়,‘২৮ দিন হয়ে গেছে – যথেষ্ঠ হয়েছে। এরপর তো সরকারকে ইল্লিগাল ডিটেনশন বা অবৈধভাবে আটকে রাখার মামলাতেও পড়তে হতে পারে। আর এই লোকগুলোর তো কোনও খেয়ালই রাখা হচ্ছে না – তাদের প্রতি চরম অযত্ন হচ্ছে। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হচ্ছে না, ভাল শৌচাগার বা কোনও সুযোগ-সুবিধারও বালাই নেই। “দিল্লির এই প্রচন্ড গরমেও সেন্টারে কোনও ফ্যান পর্যন্ত ছিল না – অনেক বলার পর অবশেষে গতকাল ফ্যান লাগানো হয়েছে।’
‘এদের চিকিৎসা পর্যন্ত হচ্ছে না, কোনও ডাক্তারও দেখতে আসছেন না। তো এই অবস্থায় এদের এভাবে রেখে কী লাভ, নেগেটিভ হলে ছেড়ে দিন!’, বলছিলেন তিনি।
গত ২২ এপ্রিল সুলতানপুরীর কোয়ারেন্টিন সেন্টারে মোহাম্মদ মুস্তাফা (৬০) ও তার ঠিক দশদিন আগে হাজী রিজওয়ান নামে দুজন তাবলিগ সদস্য মারাও গিয়েছেন। তামিলনাডু থেকে আসা এই দুজনই ছিলেন ডায়াবেটিসের রোগী এবং সংখ্যালঘু কমিশনের তদন্তে দেখা গেছে ঠিক সময়ে খাবার না-পেয়ে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
দিল্লিতে তাবলীগীদের এই কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলো অবিলম্বে খালি করে না-দেওয়া হলে এমন ট্র্যাজেডি আরও ঘটবে বলেই কমিশনের বিশ্বাস। সূত্র : বিবিসি