করোনাভাইরাসের কারণে জ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ থাকা সংসদ সদস্যদেরকে এবারের বাজেট অধিবেশনে অংশ না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এ দুটি কারণ ছাড়াও পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত সহকারী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সব মিলিয়ে ৩৮ জন এমপিকে অধিবেশনে না আসতে বলা হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া একাধিক এমপিও বিষয়টি জানিয়েছেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে বাজেট অধিবেশনে জ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ সংসদ সদস্যের (এমপি) অংশ না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে ফোন করা হয়েছে। পাশাপাশি অধিবেশনে যেন কোরাম সংকট না হয় সেজন্য তালিকা করা হয়েছে। সে তালিকা অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের বাজেট অধিবেশনে আসতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি বাজেট অধিবেশনে না অংশ নিতে জ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ এরকম প্রায় ৩৮ জন সংসদ সদস্যকে অনুরোধ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের কার্যালয় থেকে ফোন করে তাদের সংসদে না আসার অনুরোধ করা হয়। যেসব এমপিকে অধিবেশনে না আসতে অনুরোধ করা হয়েছে তারা হলেন- বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু, ভোলা-১ আসনের তোফায়েল আহমেদ, গোপালগঞ্জ-২ আসনের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকা-১৮ আসনের অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, চট্টগ্রাম-১ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ফরিদপুর-৩ আসনের খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি ও পিরোজপুর-২ আসনের আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সরকারি দলের সংসদ সদস্য শেরপুর-৩ আসনের একে এম ফজলুল হক, পাবনা-৩ আসনের মকবুল হোসেন, ময়মনসিংহ-৬ আসনের মোসলেম উদ্দিন, পটুয়াখালী-১ আসনের মো. শাহজাহান মিয়া, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের মো. দবিরুল ইসলাম, সরকারি দলের হুইপ ও খুলনা-১ আসনের পঞ্চানন বিশ্বাস, সংরক্ষিত আসনের শেখ এ্যানী রহমান ও জিন্নাতুল বাকিয়া, বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার।
সংরক্ষিত আসনের সদস্য ও রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুননেসা খান, বরিশাল-১ আসনের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, নওগাঁ-৪ আসনের ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, জামালপুর-১ আসনের আবুল কালাম আজাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ঢাকা-৮ আসনের রাশেদ খান মেনন।
করোনায় আক্রান্তের কারণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীব বাহাদুর উশৈসিং, নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকার, চট্টগ্রাম-৬ আসনের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, যশোর-৪ আসনের রণজিৎ কুমার রায়, জামালপুর-২ আসনের ফরিদুল হক খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের এবাদুল করিম, চট্টগ্রাম-৮ আসনের মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, জামালপুর-১ আসনের সরকারি দলের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদকে সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পরিবারের সদস্যের করোনা হওয়ায় চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলী, যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদ ও টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলামকে (টিটু) অধিবেশনে যোগ না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত সহকারী করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বাগেরহাট-২ আসনের শেখ তন্ময়কেও অধিবেশনে যোগ না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অবশ্য ব্যক্তিগত সহকারীর করোনা, পরিবারে অসুস্থ ও বয়স্ক সদস্য (বৃদ্ধ মা) থাকায় বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলাল উদ্দিনকে আগেই অনুরোধ করা হয়েছে এবারের অধিবেশনে যোগ না দিতে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পরপরই বাসা থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেন। এ কারণে তাকে সংসদ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। তিনি বাজেট অধিবেশনে যোগও দেননি।
গত ১৫ জুন (সোমবার) দুপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। ফলে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার শিডিউল থাকলেও তার পক্ষে আর যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না।
সংসদের অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার অনুরোধের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের বাজেট অধিবেশনে যোগ না দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
জামালপুর-১ আসনের সরকারি দলের এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সিনিয়র ও অসুস্থ সংসদ সদস্যকে ফোন করে বাজেট অধিবেশনে যোগ না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজেট অধিবেশনে যেন কোরাম সংকট না হয় সেজন্য ৭০ জনের তালিকা করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ এমপিদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যারা করোনা পজিটিভ তাদের সবাইকে নিষেধ করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ হলেন নূর-ই আলম চৌধুরী বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাজেট অধিবেশনের সীমিত পরিসরে করা হয়েছে। সংসদে জ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ এমপিদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যারা করোনা পজিটিভ তাদের সবাইকে নিষেধ করা হয়েছে।
ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, বাজেট অধিবেশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে করা হয়েছে। সংসদের সময় কমানো হয়েছে। ১২ কার্যদিবস থেকে ৮ কার্যদিবস করা হয়েছে। করোনার কারণে সিনিয়র সংসদ সদস্য ও অসুস্থদের বাজেট অধিবেশনে যোগ না দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।