জামালপুরের ইসলামপুরে অঘোষিত লকডাউনের কবলে পড়ে ইজিবাইকের এক প্রসূতি যাত্রী রাস্তায় সন্তান প্রসব করেছেন। মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ইসলামপুর সরকারি কলেজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউন চলাকালে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ইসলামপুরের কলেজ রোডে রেলের গেট বেরিয়ার ফেলে কে বা কারা যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ধনতলা গ্রামের বন্যা (২২) নামের এক প্রসূতিকে বহনকারী ইজিবাইক ওই রেলগেটে এলে সেখানে কর্তব্যরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য গেট বেরিয়ার উঠানো সম্ভব নয় বলে তাদেরকে অন্য রাস্তায় হাসপাতালে যেতে বলেন।
প্রসূতির অবস্থা খুবই জরুরি হওয়ায় তার স্বজনরা তাকে নিয়ে অন্য রাস্তায় ইসলামপুর উপজেলা হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। পথিমধ্যে ইসলামপুর সরকারি কলেজে গেট এলাকায় প্রসূতি একটি ছেলে সস্তান প্রসব করেন।
কিছুক্ষণ পর ফের ওই ইজিবাইকে করে প্রসূতি ও নবজাতককে ইসলামপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতকের উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় লকডাউন পরিস্থিতিতে জামালপুরে যাওয়া সম্ভব নয় বিধায় স্বজনরা প্রসূতি ও নবজাতককে একই ইজিবাইকে করে গ্রামের বাড়ি ধনতলায় নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে ওই নারীর স্বামী এনামুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রেলগেটে যাইয়া দেহি রাস্তা বন্ধ। পুলিশ আমগরে অন্য রাস্তা দিয়া যাবার কয়। পরে রেলগেট থেইকা ঘুইরা আসার অল্প সময় পরই রাস্তায় আমার স্ত্রীর বাচ্চা হওয়ার বেদনা ওঠে। কলেজ মোড়ের রাস্তার পাশের বাড়ির মহিলারা আইসা বাচ্চা হবার জন্য সাহায্য করেন। পরে বাচ্চার চিকিৎসার জন্য ইসলামপুর হাসপাতালেও গেছিলাম। একজন ডাক্তার কয় জামালপুরে নিয়া যাবার জন্য। আমরা গরিব মানুষ। কি করমু। তাই বাড়িত ফিরা যাই। এখন সব স্যারেরা বাড়িত আইসা অ্যাম্বুলেন্স দিল।’
রাস্তায় সস্তান প্রসব করার ঘটনাটি জানাজানি হলে ইসলামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল আব্দুন নাছের চৌধুরী বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র শেখ আব্দুল কাদের, ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন মিয়া মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওই প্রসূতির খোঁজ নিতে তার গ্রামের বাড়ি ধনতলা গ্রামে যান। তারা প্রসূতি বন্যা ও তার নবজাতক ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য ইসলামপুর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করে জামালপুর সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থার পাশাপাশি সবরকমের সহায়তার আশ্বাস দেন।
এদিকে ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, রেলগেটে আমাদের দু’জন কনস্টেবল ছিল। প্রসূতির ইজিবাইকটি সেখানে পৌঁছালে কনস্টবলরা প্রসূতির জরুরি অবস্থা দেখে তাদেরকে রেলের গেট বেরিয়ার উঠানো সম্ভব নয় বলে তাদেরকে অন্য রাস্তায় ঘুরে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেন। তখন ইজিবাইক ঘুরিয়ে প্রসূতিকে নিয়ে তারা সেখান থেকে চলে যায়। পরে জানা গেছে যে ওই প্রসূতি রাস্তায় এক বাড়িতে সস্তান প্রসব করেছেন।
তিনি আরো বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সেখানে গেট বেরিয়ার নামিয়ে রাস্তা বন্ধ করা হয়নি। তবে কারা গেট বেরিয়ার নামিয়ে রেখেছে তা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার এ এ এম আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, প্রসূতির সস্তানটি সাত মাসের মাথায় জন্মেছে। নবজাতকের খুবই জরুরি অবস্থা দেখেই হয়তো জরুরি বিভাগ থেকে তাদেরকে জামালপুরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কাজে আমি ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করছিলাম। ঘটনাটি শোনার পর আমি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওই প্রসূতির বাড়িতে গিয়েছিলাম। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, মেয়র ও সার্কেল এএসপিও আমার সাথে ছিলেন। আমরা শিশুটির জরুরি উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করেই বিকেলে প্রসূতি ও নবজাতককে জামালপুর সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছি।